স্কিল কোর্স ১: কুকিং বা রান্না

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় – স্কিল কোর্স ১: কুকিং বা রান্না

স্কিল কোর্স ১: কুকিং বা রান্না

স্কিল কোর্স ১: কুকিং বা রান্না

 

স্কিল কোর্স ১: কুকিং বা রান্না

ভাত রান্না

রাইয়ান ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তার মা-বাবা দুজনই চাকুরি করেন। বাড়িতে যখন থাকেন, তখন দুজনেই ভাগাভাগি করে পরিবারের নানা কাজ করেন। রাইয়ানের মা-বাবা রোজ সকাল ৮টায় অফিসের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। অফিসে যাওয়ার আগে বাবা বিছানাপত্র গোছান, ঘর-দোর পরিষ্কার করেন; আর মা সবার জন্য নাস্তা তৈরি করেন, রাইয়ান আর তার ছোট বোনের টিফিন বক্সে খাবার প্রস্তুত করে দেন, দুপুরের জন্যও সবার খাবার রান্না করেন।

অফিস থেকে ফিরেন সন্ধ্যায়। বাড়িতে ফিরে এসেই আবার রান্নাঘরের কাজ শুরু করেন। বাবা-মায়ের কষ্ট দেখে রাইয়ানও খুব কষ্ট পায়। তাদের কষ্টটা সে একটু কমাতে চায়। তার খুব ইচ্ছা মায়ের কাজে সাহায্য করা। একদিন রাইয়ান মায়ের কাছে গিয়ে বলল, ‘মা, আমাকে রান্না শিখিয়ে দাও। আমি তোমাকে রান্নায় সাহায্য করতে চাই’। রাইয়ানের কথায় মা খুব খুশি হন। তিনি আদর করে বলেন, ‘ঠিক আছে, আগামীকাল আমার অফিস বন্ধ। তোমাকে কালকে ভাত রান্না করা শেখাব’।

ভাত বাঙ্গালির প্রধান খাদ্য। পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষেরই প্রধান খাবার ভাত। বিশ্বে বিভিন্ন জাতের ভাতের চাল আছে । আবার দেশভেদে ভাত রান্নার পদ্ধতিও একেক রকম। চালের বহুরূপতা ও রান্নার পদ্ধতির ভিন্নতার কারণে ভাতের ক্যালরি, শর্করা এবং আঁশের পরিমানে ভিন্নতা ঘটে থাকে। যেমন- সাদা ভাত, লাল চালের ভাত, আতপ চালের ভাত, সিদ্ধ চালের ভাত, মোটা কিংবা চিকন চালের ভাত।

ভাতে আছে ভিটামিন ও খনিজ। আমরা ভাত থেকে বি ভিটামিন পাই, যা স্নায়ুতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। এই পাঠ শেষে আমরা-

পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে, সহজ উপায়ে (পরিবেশ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে) নিরাপদে ভাত রান্না করতে পারব।

ভাত রান্নার আগে আমাদেরকে যা যা শিখে নিতে হবে:

  • চাল পরিমাপ করা
  • চাল ধোয়া
  • চুলা জ্বালানো

সিদ্ধ চাল, চিকন বা মোটা, আতপ চাল সব ধরণ দিয়েই ভাত রান্না করা যায়। তবে বিভিন্ন রকমের চাল দিয়ে ভাত রান্না করার ক্ষেত্রে পানির পরিমানে সামান্য কম বেশি দেয়া প্রয়োজন হয়।

এসো করি

রাইয়ানের মা ছুটির দিনে রাইয়ানকে বললেন, ‘চল আমরা ভাত রান্না শিখি। ভাত রান্না করতে যা যা লাগবে-

  • চাল- ১ কাপ
  • পানি ৩ কাপ (চালের তিনগুণ পানি

রাইয়ানের মা যেভাবে তাকে ভাত রান্না শেখালেন, এখানে সেগুলো ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হলো

ধাপ – ১  প্রথমে ১ কাপ চাল পরিমাপ করে নাও। চালে পাথর, কাকর, ধান থাকতে পারে, এজন্য পানি দিয়ে ধোয়ার আগে শুকনো অবস্থায়ই ভালোভাবে বেছে নাও।

ধাপ – ২ বেছে নেওয়া চাল পাত্রে হাড়িতে ঢেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ২/৩ বার ধুয়ে নাও। এখন হাড়িতে ধোয়া চালে ৩ কাপ পানি দাও।

সতর্কতা

  • প্রতিবার ধোয়ার সময় চাল ছেঁকে যখন পানি ফেলবে তখন সতর্ক থাকতে হবে পানির সাথে যেন চাল পড়ে না যায়।
  • ধোয়ার সময় লক্ষ্য রাখবে পরনের জামা- কাপড় যেন ভিজে না যায়।

ধাপ – ৩ চুলা সাবধানে জ্বালাও। ঢাকনা দিয়ে ডেকে চুলার আঁচ বাড়িয়ে দাও । কাছে দাঁড়িয়ে ৫/৬ মিনিট অপেক্ষা করো। পানি ফুটে উঠলে সঙ্গে সঙ্গে ঢাকনা সরিয়ে দিয়ে চুলার আঁচ মাঝামাঝি করে দাও। চামচ বা খুন্তি দিয়ে ভাত নেড়ে দাও (একেক চাল ফুটে ওঠার সময় চালের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে)।

সতর্কতা

  • ফুটে উঠার আগ পর্যন্ত চুলার কাছাকাছি থাকতে হবে, তা না হলে পানি ফেনাসহ ফুলে উঠে পানি পড়ে গিয়ে চুলা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
  •  খুন্তি দিয়ে নাড়ার সময় হাত নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। সম্ভব হলে হাতে কিচেন গ্লাভস পরে নেয়া যেতে পারে।
  • খুন্তি দিয়ে উল্টানোর সময় ভাতের হাড়ি তাপরোধী কিছু দিয়ে (কাপড় ধরনি) ধরে নিতে হবে, তা না, হলে হাড়ি বেশি চাপ লেগে পড়ে যেতে পারে।

ধাপ-৪ ভাতের পানি একটু কমে এলে চুলার আঁচ একদম কমিয়ে দাও। পানি শুকিয়ে এলে কিছুক্ষণ ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখে দাও। পুরোপুরি পানি টেনে এলে চুলা বন্ধ করে দাও। ব্যস, হয়ে গেল ঝরঝরে বসানো ভাত।

সতর্কতা

  • পানি শেষ হয়ে গেলে সাথে সাথে চুলা বন্ধ করে দিতে হবে, তা না হলে হাড়ির নিচে পোড়া লেগে যেতে পারে।

এসো ভেবে দেখি

ক) চাল ৩বার ধোয়ার পরও কি আরও ধোয়ার প্রয়োজন ছিল?

খ) ভাতের মাড় পড়ে কি চুলা নিভে গিয়েছিল?

গ) রান্নার পর ভাত কি বেশি নরম বা শক্ত হয়েছে?

ঘ) ভাত রান্না করতে পেরে তোমার কেমন লাগছে?

ঙ) ভাত রান্নার সময় আরও কি কি সতর্কতা আমাদের মেনে চলা প্রয়োজন?

এসো নিজে নতুনভাবে বানাই

আমাদের বাড়িতে চালের ভিন্ন ভিন্ন ধরন ও পরিমান অনুযায়ী ভাত রান্না করার প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী চাল দিয়ে বাড়িতে বাবা-মা, কিংবা বড় কারও সহায়তা নিয়ে ভাত রান্না অনুশীলন করো। স্কুলে সহপাঠিরা মিলে নিজেদের ক্লাসে রান্না করে শিক্ষককে দেখাও। বাড়িতে প্রয়োজন অনুযায়ী অনুশীলন করো, বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে অন্যদের পরিবেশন কর এবং ছবি তুলে রাখ কিংবা এঁকে রাখ।

 

স্কিল কোর্স ১: কুকিং বা রান্না

 

ডিমভাজা

ডিম খুবই সুস্বাদু এবং অতি পরিচিত পুষ্টিকর একটি খাবার। তোমরা নিশ্চয়ই জানো, দেহের গঠন ও বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। ডিম হলো প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। তোমার বয়সী ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন ১টি করে ডিম খেলে সে সুস্থ থাকবে এবং বয়স অনুযায়ী বৃদ্ধি ঠিক থাকবে। চোখের সুস্থতার জন্যও প্রতিদিন ডিম খাওয়া জরুরি। ডিমে প্রোটিনের পাশাপাশি ভালো পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।

ডিমে দেহের প্রয়োজনীয় প্রায় সকল পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। ডিম রান্না করাও সহজ। যখন ইচ্ছে হবে, তখনই তোমার পছন্দ অনুযায়ী ডিম রান্না করে খেতে পারবে। ভাজা, সিদ্ধ, পৌঁচ, তরকারি ইত্যাদি বিভিন্নভাবে ডিম খাওয়া যায়। তাছাড়া ডিম দিয়ে সুস্বাদু ও বৈচিত্র্যময় নাস্তা তৈরি করে খাওয়া যায় ও বিভিন্ন পরিবেশে পরিবেশন করা যায়।

এই পাঠ শেষে আমরা-

সহজ উপায়ে, নিরাপদে ও অল্প সময়ে ডিম ভাজি করতে পারব। ডিম ভাজার আগে আমাদেরকে যা যা শিখে নিতে হবে:

  • পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ কুঁচি করে কাটা
  • চুলা জ্বালানো
  • থালা-বাটি ইত্যাদি পরিষ্কার করে ধোয়া

মুরগির ডিম, হাঁসের ডিম বা অন্য যেকোনো ডিম ভাজার জন্য একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

 

স্কিল কোর্স ১: কুকিং বা রান্না

 

এসো করি

রূপকথা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। অসুস্থতার কারণে তার মায়ের পক্ষে আজ রান্না করা সম্ভব হয়নি। তার বাবাও সকালে অফিসে চলে গেছেন। বাসায় রান্না করার মতো কেউই নেই। ক্ষুধায় কাতর রূপকথা মায়ের কাছে গেল। মা রূপকথাকে বলল, তুমি চাইলে খুব সহজেই একটি ডিম ভাজি করে খেতে পারো।

ডিম রূপকথার পছন্দের খাবার হওয়ায় সে খুব খুশি হলো। কিন্তু পরক্ষনেই বলল, ‘আমিতো ডিম ভাজি করতে পারিনা মা।’ মা রূপকথাকে আদর করে কাছে বসালেন এবং বললেন, ‘তুমি অবশ্যই পারবে। কীভাবে ডিম ভাজতে হয় তা আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি, আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনো। তাহলে তুমিও পারবে। মা বলতে শুরু করলেন-

ডিমভাজার জন্য যা যা লাগবে

ডিম- ১টি, পেঁয়াজ (ছোট আকারের)-১ টি, কাঁচামরিচ- ১ টি, তেল-১ চা চামচ

রূপকথার মা তাকে ধাপে ধাপে যেভাবে ডিমভাজা শেখালেন-

ধাপ – ১ প্রথমে বটি বা ছুরি, বাটি, চামচ, কড়াই, খুন্তি, প্লেট পরিষ্কার করে ধুয়ে নাও।

সতর্কতা

  • বটি বা ছুরি সাবধানে নাড়াচাড়া করবে, হাতে লাগলে কেটে যেতে পারে।
  • ধোয়ার সময় লক্ষ্য রাখবে পরনের জামা-কাপড় যেন ভিজে না যায়।

ধাপ – ২ প্রথমে বটি বা ছুরি, বাটি, চামচ, কড়াই, খুন্তি, প্লেট পরিষ্কার করে ধুয়ে নাও।

সতর্কতা

  • পেঁয়াজের মুখ কাটার সময় বটি বা ছুরি সাবধানে চালাবে।
  • ধোয়ার সময় লক্ষ্য রাখবে পরনের জামা-কাপড় যেন ভিজে না যায়।

এবার একটি পেঁয়াজের খোসা ছাড়াতে হবে। প্রথমে পেঁয়াজের মুখ ও পেছনের অংশ কেটে নিবে, এরপর খোসা ছাড়িয়ে নাও। এবার খোসা ছাড়ানো পেঁয়াজ ও একটি কাঁচামরিচ পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নাও।

ধাপ-৩ প্রথমে পেঁয়াজটিকে দুইভাগ করে নাও। বটিতে কাটলে একটি ভাগ বটির মাথায় গেঁথে দাও, তাহলে কাটার সময় এর ঝাঁজ চোখে লাগবে না। এবার সাবধানে বাকী অংশ ও কাঁচামরিচ কুচি করে কেটে বাটিতে রাখ। কাঁচামরিচ কাচি দিয়ে কাটতে বেশি সুবিধা, তাতে হাত দিয়ে কাটা অংশ ধরতে হয়না, দ্রুত ও নিরাপদে কাটা যায়।

সতর্কতা

  • পেঁয়াজ কাটার সময় বটি বা ছুরি সাবধানে চালাবে।
  • পেঁয়াজ কাটার সময় ঝাঁজ বের হতে পারে, চোখে পানি এসে ঝাপসা হয়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে চোখ মুছে নিবে।
  • মরিচ কাটার শেষ হলে সঙ্গে সঙ্গে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিবে। তা না হলে যেখানে হাত লাগবে সেখানেই জ্বালা করতে পারে।

ধাপ-৪ সাবধানে বাটির উপর রেখে ডিমটি ফেটিয়ে নাও (বাটির কোনায় বা শক্ত কোথাও ঠেস দিয়ে ফেটতে হবে)।

সতর্কতা

  • ডিমটি ভালোভাবে ধরবে যাতে ফাটানোর সময় পড়ে না যায়।
  • কোনোভাবেই যেন ডিমের খোসার টুকরো বাটিতে না পড়ে।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ধাপ-৫ এরপর ডিমে সামান্য লবন যোগ করো। এবার একটি চামচ অথবা কাঁটাচামচ অথবা বিটার দিয়ে ভালোভাবে ডিম, পেয়াজকুঁচি, কাঁচামরিচকুঁচি ও লবন মিশিয়ে নাও।

সতর্কতা

  • আলতোভাবে মেশাবে, বেশি জোরে জোরে নাড়লে বাটিসহ উল্টে পড়ে যেতে পারে।

ধাপ-৬ এরপর খুব সাবধানে চুলা জ্বালাও (নিজে না পারলে কারো সাহায্য নাও)। একটি কড়াই চুলায় দিয়ে তাতে এক চা চামচ তেল দাও। কড়াই ও তেল গরম হলে তাতে ডিমের মিশ্রণটি সাবধানে তেলের উপর ঢেলে দাও।

সতর্কতা

  • আগুনের বিষয়ে খুব সাবধানে থাকবে।
  • ডিমের মিশ্রণ ঢালার সময় তেল ছিটে আসতে পারে, তাই হাত নিরাপদ দূরুত্বে রাখতে হবে। সম্ভব হলে হাতে কিচেন গ্লাভস পরে নিতে পারো।

বর্ণনা শেষ করে মা রূপকথাকে বললেন, ‘যেকোনো সমস্যা হলে আমাকে ডাকবে। অবশ্য তুমি ইচ্ছে করলে ইউটিউবে সার্চ দিয়ে ডিমভাজার ভিডিও দেখে নিতে পারো। আচ্ছা মা, এবার যাও আয়োজনে লেগে পড়া রূপকথা এতক্ষণ ধৈর্য্য সহকারে মায়ের কথা শুনল। এরপর সে রান্না ঘরে চলে গেল। কিছুক্ষনের মধ্যেই ডিমভাজার গন্ধ বাড়িময় ছড়িয়ে পড়ল।

রূপকথা একটি প্লেটে ডিমভাজা নিয়ে বীরের ভঙ্গিতে মায়ের সামনে এসে দাঁড়ালো। মা রূপকথাকে খুশিতে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন, শুধু ডিমভাজাও হতে পারে তোমার নাস্তা। তোমার যখনই ইচ্ছা হবে বা ক্ষুধা পাবে এভাবে ডিম ভেজে ভাতের সাথেও খেতে পারবে।

এসো ভেবে দেখি

  • ডিম ভাজার জন্য কী কী তেল ব্যবহার করা যাবে?
  • ডিমভাজা কি নাস্তা হিসাবে খাওয়া যাবে?
  • ডিম ভাঙার সময় কী রকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে?
  • পেঁয়াজ কাঁটার সময় কেমন লেগেছিল?
  • ডিম ভাজার সময় আরও কী কী সতর্কতা মেনে চলা প্রয়োজন?
  • ডিম তেলে ছাড়ার সময় তেল ছিটার হাত থেকে বাঁচার উপায় কী?

কি শসিখলা

  • সকল উপকরণ ও সরঞ্জাম পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নেয়া।
  • ছুরি, বটি ইত্যাদি ধারালো সরঞ্জাম সাবধানে ব্যবহার করা ও কাজ শেষে সঠিক স্থানে গুছিয়ে রাখা।
  • ডিমভাজার পদ্ধতি ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করা।

এসো নিজে নতুনভাবে বানাই

ডিমের সাথে আরও কিছু যোগ করে কিংবা ডিজাইন করে ভিন্নভাবে কীভাবে ডিম ভাজা যায়, তা নিয়ে একটু ভাবো। তোমার নতুন কোনো আইডিয়া দিয়ে (যেমন ডিমের সাথে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, লবনের সাথে টমেটো, ধনেপাতা কুচি অল্প পরিমাণে যোগ করে অথবা চামচ / ফয়েল দিয়ে ভিন্ন আকারে) ডিম ভালো এবং শিক্ষককে দেখাও। বাড়িতে প্রয়োজন অনুযায়ী অনুশীলন করো, বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে অন্যদের পরিবেশন কর এবং ছবি তুলে রাখ কিংবা এঁকে রাখ

 

স্কিল কোর্স ১: কুকিং বা রান্না

 

আলু ভর্তা

পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় ‘ছুটি’কে সবাই ডাকতো আলু নামে। এর পিছনে গল্পটা খুব দারুণ। ক্লাসে সবার সাথেই ছুটির খুব ভাব ছিল। যাকেই জিজ্ঞেস করা হতো সে-ই বলতো, ‘ছুটি আমার বেস্ট (সবচেয়ে ভালো) ফ্রেন্ড!’ সব তরকারিতে আলু যেমন ভালো মানায় তেমনি ক্লাসের সবার সাথেই ছুটি খুব ভালো মানিয়ে চলে; এজন্যে দুষ্টরা সবাই আদর করে তাকে আলু ডাকতো। তাদের পর্যবেক্ষন্টা কিন্তু বেশ মজার।

আমাদের দেশে আলু প্রধান খাবার না হলেও সহায়ক খাবার হিসাবে প্রায় সব কিছুর সাথেই আলু ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে সব ছাড়িয়ে ভাতের সংগে আলু ভর্তা আমাদের দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় সবার পছন্দ আলু ভর্তা। আমরা আলু থেকে শুধু যে শর্করা পাই তা নয়, এতে আছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স।

আলু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে, হজমে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। এত যার উপকারিতা সেই আলু দিয়ে আমরা একটি সহজ ও মজার খাবার বানানো শিখব। এই পাঠ শেষে শিক্ষার্থীরা-

নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে সহজ উপায়ে মজাদার আলু ভর্তা তৈরি করতে পারবে।

আলু ভর্তা বানানোর আগে আমাদেরকে যা যা শিখে নিতে হবে:

  • পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ কুঁচি করে কাটা
  • আলু সিদ্ধ করা এবং এর খোসা / চামড়া উঠানো (জেলা)
  • চুলা জ্বালানো

যেকোনো আলু যেমন জাম বা ললিতা (ছোট, বড় আকৃতির ) ভর্তা করার জন্য একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। অনেকে আলুর সাথে সিদ্ধ ডিম, শিম, বেগুন, কাঁঠালের বিচি ইত্যাদিও যুক্ত করে থাকে।

 

স্কিল কোর্স ১: কুকিং বা রান্না

চিত্র – নানাজাতের আলু

এসো করি

বাদল ও তার সহপাঠীরা একদিন টিফিনের সময় সবার পছন্দের খাবারের কথা বলছিল। বাদলের বন্ধু মেঘ কিছুদিন আগে ওদের স্কুলে ভর্তি হয়েছে। সে বলল, আলু দিয়ে তৈরি যেকোনো খাবারই তার পছন্দ। টিফিনে সে প্রায়ই আলু দিয়ে বানানো খাবার নিয়ে আসে। গল্পচ্ছলে সে বলল যে তার দাদাভাই খুব ভাল রান্না করেন। তাদের বাড়িতে যৌথ পরিবার হওয়ায় রোজ অনেক রান্না করতে হয়।

দায়িত্ব ভাগ করে দাদা-দাদি, চাচা-চাচী সবাই একেকদিন রান্না করেন। সেও তাদের সঙ্গে থেকে থেকে অনেক রান্না শিখেছে। সে বলল, ‘দাদাভাইয়ের কাছ থেকে এসব শিখে আমি নিজেই সব রান্না করি আর নিশ্চিন্তে আরাম করে খাই। আলু দিয়ে আমি এখন আমি নানাপদও রান্না করতে জানি’। তার গল্প শুনে সবাই তাকে অনুরোধ শুরু করলো, আমরা তো ভাত রান্না আর ডিম ভাজা শিখেছি, তুমি তাহলে আমাদেরকে আলু ভর্তা বানানো শিখিয়ে দাও।

তাদের অনুরোধে মেঘ তখন বিজ্ঞের মতো শেখানো শুরু করলো, ‘আলুভর্তা হলো এমন একটি খাবার, যা খুব সহজে তৈরি করা যায়। এবং খেতেও সুস্বাদু। এটি গরম ভাত কিংবা পান্তা ভাতের সাথে খেতে খুবই মজা।

এরপর ধাপে ধাপে বর্ণনা করে ক্লাসের সবাইকে শেখানো শুরু করল।

আলু ভর্তা করতে যা যা লাগবে-

আলু-৩/৪ টি, পেয়াজ-২টি (ছোট আকারের), কাঁচা মরিচ ২/৩ টি, লবণ- স্বাদমতো, তেল- ১ চা চামচ (সরিষা)

আলু ভর্তা বানানোর জন্য ছবিতে দেয়া ধাপ অনুসরণ করি আলু ভর্তা বানানোর জন্য ছবিতে দেয়া ধাপ অনুসরণ করি

ধাপ – ১ প্রথমে বটি, ছুরি, বাটি, প্লেট পরিষ্কার করে ধুয়ে নাও। তিন/চারটি আলু নাও এবং পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নাও।

সতর্কতা

  • বটি বা ছুরি সাবধানে নাড়াচাড়া করবে, হাতে লাগলে কেটে যেতে পারে।
  • ধোয়ার সময় লক্ষ্য রাখবে পরনের জামা-কাপড় যেন ভিজে না যায়।

ধাপ – ২ একটি পাত্রে ধোয়া আলুগুলো রেখে এর মধ্যে পানি ঢালো যাতে পানির লেভেল আলুগুলোর দুই-তিন ইঞ্চি উপরে থাকে। চুলায় আগুন জ্বালিয়ে আলু সেদ্ধ করো। উচ্চজ্বালে আলু সিদ্ধ হতে আনুমানিক ১৫- ২০ মিনিট সময় লাগে। আলু সিদ্ধ হলো কিনা তা চামচ বা খুন্তির সাহায্যে পরখ করে দেখতে হবে।

সতর্কতা

  • আগুনের বিষয়ে খুব সাবধানে থাকবে।
  • আলু সিদ্ধ হলো কিনা তা চামচ বা খুন্তির সাহায্যে পরম করে দেখার সময় হাত নিরাপদ দুরুত্বে রাখতে হবে। সম্ভব হলে হাতে কিচেন গ্লাভস পরে নেয়া যেতে পারে।
  • যুক্তি দিয়ে পরখ করার সময় পাত্রটি তাপরোধী কিছু দিয়ে (কাপড় ধরনি) ধরে নিতে হবে, তা না হলে পাত্রটি বেশি চাপ। লেগে পড়ে যেতে পারে।

ধাপ-৩ আলু যখন সিদ্ধ হচ্ছে তখন ভর্তার জন্য পেঁয়াজ, মরিচ প্রস্তুত করে নাও। একটি কাঁচা মরিচ ও একটি পেয়াঁজ খোসা ছাড়িয়ে ভালো করে ধুয়ে নাও। ডিমভাজার জন্য যেভাবে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ কুচি কুচি করে কেটেছিলে, ঠিক সেভাবে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ কুচি কুচি করে কেটে নাও।

সতর্কতা

  • পেঁয়াজ কাটার সময় বটি বা ছুরি সাবধানে চালাবে।
  • পেঁয়াজ কাটার সময় ঝাঁজ বের হতে পারে, চোখে পানি এসে ঝাপসা হয়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে আগে চোখ মুছে নেবে।

ধাপ-৪ আলু সিদ্ধ হয়ে গেলে ঠান্ডা হবার জন্য কিছুক্ষণ সময় অপেক্ষা করো। সিদ্ধ আলু ঠান্ডা হলে হাত পরিষ্কার করে ধুয়ে ভালোভাবে মুছে নিয়ে। একটা একটা করে আলুর খোসা ছাড়িয়ে নাও। আলু হাত দিয়ে চেপে চেপে ভর্তা করে একটি পাত্রে রাখো।

সতর্কতা

বেশি গরম অবস্থায় ধরা যাবে না; একটু ঠান্ডা হলে খোসা ছাড়াতে হবে।

এসো ভেবে দেখি

  • এই পদ্ধতি ব্যবহার করে অন্য কোনো সবজি দিয়ে কি ভর্তা বানানো যাবে?
  • আলুর আকৃতি বড় হলে সিদ্ধ করার সময় কি করা যেতে পারে?
  • এই কাজের বিশেষ সাবধানতাগুলো কি কি ?

কী শিখলাম

  • সকল পাত্র, উপকরণ ও সরঞ্জাম পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নেয়া।
  • ছুরি, বটি ইত্যাদি ধারালো সরঞ্জাম সাবধানে ব্যবহার করা ও কাজ শেষে সঠিক স্থানে গুছিয়ে রাখা।
  • আলু সিদ্ধ করার পর পাত্রে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে ঠাণ্ডা হবার জন্য যাতে গরম আলু বা পানি লেগে হাত পুড়ে না যায়।
  • আলু ভর্তা করার কলাকৌশল

এসো নিজে নতুনভাবে বানাই

আরো অনেকভাবে আলু ভর্তা বানানো যায়, যেমন- শুকনো মরিচের গুড়া, ধনেপাতা বা অন্য কোনো সিদ্ধ সবজি মিশিয়ে। ধরন ও পরিবেশনে বৈচিত্র্য এনে তোমার নিজের পছন্দমতো আলু ভর্তা বানাও এবং শিক্ষককে দেখাও। বাড়িতে প্রয়োজন অনুযায়ী অনুশীলন করো, বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে অন্যদের পরিবেশন কর এবং ছবি তুলে রাখ কিংবা এঁকে রাখ।

আরও দেখুন :

Leave a Comment