প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও ব্যবহার

প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও ব্যবহার নিয়ে আজকের আলোচনা : অফিসের কোন এক সহকর্মীকে আপনার অপছন্দ হতেই পারে, তবে তাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ‘পচানি’র দরকার নেই। সাম্প্রতিক প্রকাশিক এক সার্ভে রিপোর্ট বলছে- বর্তমানে দশজনের একজন চাকরি খোয়ান সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘আপত্তিকর’ প্রোফাইলের জন্য।

[ প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও ব্যবহার ]

প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও ব্যবহার | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস্ বিশ্বাস

ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন, স্নাপচ্যাট, ইনিস্ট্রাগ্রামে নিজের চাকরি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করায় বিপাকে পড়েছেন অনেকে। কর্মক্ষেত্রকে ব্যঙ্গবিদ্রুপ বন্ধুমহলে করা, আর পাবলিক প্লেসে সেটা জোর গলায় জানানো, এক জিনিস নয়। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়াকে নিজের পার্সোনাল স্পেসের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে। মনে রাখতে হবে কথাটা সোশ্যাল মিডিয়া, অর্থাৎ সামাজিক এক মাধ্যম। যেখানে ‘সামাজিকতা’ রক্ষা করতে হবে। আর যে কোনও প্রতিষ্ঠানের কিছু কোড অফ কন্ডাক্টস থাকে।

 

Office Work Place 3 প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও ব্যবহার

 

সোশ্যাল মিডিয়াতেও সেটা আবশ্যক। অবশ্য ডোন্ট কেয়ার হওয়াই যায়। তবে এখানেও নিউটনের তৃতীয় সূত্র কাজ করবে – ফর এভরি অ্যাকশন দেয়ার ইজ অ্যান ইকুয়াল অ্যান্ড অপোজিট রিঅ্যাকশন। তখন ঠ্যালা সামলাতে হবে আপনাকেই।

বিশেষ করে যারা কর্মজীবনের সদ্য পা রাখছেন তাঁদের এই সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে হুঁশিয়ার হওয়া দরকার। এক সার্ভে বলছে, যারা চাকরি খোয়ান, তাঁদের প্রতি ১০ জনের একজনের খোয়ানোর কারণ অরুচিকর সোশ্যাল প্রোফাইল। কিন্ত্ত কর্পোরেট দুনিয়ায় সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল তৈরি করে অনেকে কেরিয়ারে উন্নতি করেন। আবার অনেকেই কর্মক্ষেত্র থেকে বহিষ্কৃত হন। কোনটা বেছে নেবেন পুরোটাই আপনার উপর। সুতরাং, ভাবুন। তার ফাঁকে কয়েকটা টিপস্-

সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য ১০ টি টিপস:

  • অনেকই আছে নিজের আসল নাম বাদ দিয়ে ‘ফেকনেম’ দিয়ে স্যোশাল নেট্ওয়ার্কে এক্টিভ। যেমন: রূপকথার রাজকুমার, ডানাকাটা পরি, নিঃসঙ্গ কবি। এই ধরণের নাম প্রফেশনাল লাইফে কখনও কাম্য নয়। একটু ভেবে দেখুন অফিসের ফেসবুক পেজে আপনার কোন অফিসিয়াল ছবি পোস্ট করার পর তাতে আপনাকে ট্যাগ করলে কেমন দেখাবে? অন্যরা মুচকি হাসি দিবে পোস্টা দেখে – আপনাদের অফিসে রূপকথার রাজকুমার চাকুরী করে!
  • নিজের বস বা সহকর্মীরা কতটা ‘বদল’ আর আপনি কতটা ‘স্মার্ট’ সেই কথা টুইটে-স্ট্যাটাসে-পোস্ট না করাই ভালো। অফিসে কারোও সাথে আপনার ‘গ্যাঞ্জাম’ থাকতেই পারে। তবে তা পাবলিক স্পেসে উগলাবেন না। মনে রাখবেন এটা বন্ধুদের আড্ডামহল নয়। আপনার এরকম অসংলগ্ন আচরণে কর্তৃপক্ষ ক্ষুব্ধ হতে বাধ্য। শুধু তাই নয়। নিজের বন্ধু, বান্ধবীকেও গালমন্দ করার জায়গা নয় এটি। কাউকে তাচ্ছিল্য করে কটূক্তি করা আপনার ইম্প্রেশনের জন্য মোটেই ভালো নয়।
  • যে-কোনও বৈষম্যমূলক মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে আপনার শ্লেষবাক্য আপনাকেই বিপদে ফেলতে পারে। আইনি ঝামেলায়ও পড়তে পারেন।
  • উইকএন্ডে কি করেছেন বা আপনার ছেলেবন্ধু/ মেয়েবন্ধুর সংখ্যা কত, সেটা অফিসের সবাইকে জানাটা কি খুব দরকার? বা ধরুন এমন কিছু ছবি যেটা মনে হতেই পারে খুব মজার, তা হয়ত কর্তৃপক্ষের কাছে অরুচিকর। এইসব ফটো বা পার্সোনাল লাইফ সম্পর্কে তথ্য পোস্ট করার আগে প্রাইভেসি অপশনটা ভালো করে দেখে নিন।
  • অফিস আওয়ারে সোশ্যাল হওয়ার প্রয়োজনীয়তা হয়ত খুব একটা ইেন। কর্মকাণ্ড থেকে ফাঁক পেলে ফেসবুক নিয়ে সময় কাটানো এখন অনেকেরই স্বভাব। বিগ বসের নজর আপনারা দিকেই। একদিন সোশ্যাল হওয়ার দরুন কর্তৃপক্ষের কথা শুনতে হতে পারে। তাই আপাতত ওই সময়টুকু চার দেওয়ালের অন্দরেই মন দিন।
  • নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে বিগত কয়েক দিনের কুরুচির মন্তব্যগুলো ডিলিট করে দিতে পারেন। টুইটারে পোস্ট সাফাই করতে হলে ট্যুইটওয়াইপ কাজ দেবে। যাবতীয় গোলমেলে টুইট নিমেষে হাপিশ হবে এতে। কারোও চোখ পড়ার আগেই আপনি কালিমামুক্ত। আপনার প্রাইভেসি যাতে সোশ্যাল ফোরামে সুরক্ষিত থাকে সেটাতেও নজর দিন। টুইটারে সেটিং অপশন থেকে ‘প্রটেক্ট মাই ট্যুইটস’ বেছে নিন। ভবিষ্যতে কিছু নির্দিষ্ট লোক ছাড়া আপনার টিকিটি কেউ পাবে না।
  • ফেসবুক হলে প্রাইভেসি সেটিং অপশনটা কাজে লাগান। এখানে আপনার কীর্তিকলাপ সহজেই সেন্সর করতে পারেন। আপনার কোন ছবি বা পোস্ট কে দেখবে, সেটা আপনিই ঠিক করতে পারেন। বা কে আপনাকে ট্যাগ করতে পারে। এ সবই প্রাইভেসি সেটিং দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দরকার পড়লে অফিসের জন্য একটি আলাদা গ্রুপ তৈরি করুন। যে -যে আপডেট এই গ্রুপের নজরের বাইরে রাখতে চান তা প্রাইভেসি অপশন থেকে বেছে নিন। ভবিষ্যতে কিছু আপডেট দেওয়ার আগে ভিউয়িং অপশনটা কাজে লাগান। ব্যস, মুশকিল আসান।
  • আপনি যেখানে চাকুরী করেন, সেখানকার রিপ্রেজেনটিভ আপনি। তাই তাই কোন কিছু পোস্ট করার সময় অবষ্যই তথ্য জেনে-বুঝে-দায়িত্ব নিয়ে শেয়ার করবেন।

Office Work Place 1 প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও ব্যবহার

 

লেখক,

শামস বিশ্বাস

শামস্ বিশ্বাস’-এর পুরো নাম শামীম ফরহাদ শামস্। রাজশাহী কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, রাজশাহী ল কলেজ থেকে এল.এল.বি (পাস) এবং ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা) থেকে মার্কেটিংয়ে ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতকোত্তর। আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, আমার দেশ, ইত্তেফাক, যুগান্তর, সমকাল এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিয়মিত প্রদায়ক ছিলেন। এখন নিয়মিত লিখছেন দৈনিক আমাদের সময়ে। মেটা (ফেসবুক) সার্টিফাইড ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েট শামস্-এর ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার শুরু ২০১১ সাল থেকে। চাকুরী করেছেন টেকনোবিডি ওয়েব সল্যুশন (প্রা.) লি., ঈগল মিউজিক, গুরুকুল এবং বিজয় টিভি তে। বর্তমানে কর্মরত আছেন এ সি আই মটরস্-এ। ব্যক্তিজীবনে শামস্ এক সন্তানের জনক।

 

আরও পড়ুন:

Leave a Comment