আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় বাংলাদেশের প্রাচীন আর্থ সামাজিক অবস্থা।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশের প্রাচীন আর্থ সামাজিক অবস্থা
বাংলাদেশে জনবসতি ছিল প্রাচীনকাল থেকেই। কৃষি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে মানুষ স্থায়ী বসবাস শুরু করে। আর কৃষি ব্যবস্থার প্রবর্তন হয় নদী তীরবর্তী অঞ্চলে। সে কারণেই পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাসমূহ নদীর তীরেই গড়ে উঠেছিল। স্থায়ী জনবসতি গড়ে উঠেছিল নদীকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। কাজেই অনুমান করা যায় এখানকার জনবসতি ও কৃষি ব্যবস্থা সুপ্রাচীন কালের।
আদি যুগে বাংলায় ছিল ‘কৌম’ সমাজ। এদেশের মানুষ এক জায়গায় মিলেমিশে দলবদ্ধভাবে বাস করতো, এটাই কৌম সমাজ নামে পরিচিত ছিল। কৌম সমাজে জমির কোনো মালিকানা ছিল না। সবাই মিলেমিশে জমি চাষবাস করতো। জমির মালিক ছিল কৌম সমাজের সকল সদস্যের। কৌম সমাজে ছিল না রাজা বা প্রজা।
নৃবিজ্ঞানীদের ধারণা, আনুমানিক পাঁচ হাজার বছর আগে এদেশে বাস করতে ‘নিগ্রোবটু জাতি। প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতি উন্মেষের পূর্বেই বাংলাদেশে এ-জাতির অস্তিত্ব ছিল। এদের মাথা একটু বেশি লম্বা, নাক চওড়া। গায়ের রং ছিল মিশমিশে কালো।
আনুমানিক আড়াই হাজার বছর আগে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ‘অস্ট্রিক’ জাতি। বাংলাদেশের মানুষের কৃষিভিত্তিক জীবনের শুরু হয় অস্ট্রিক জাতি-গোষ্ঠীর হাতেই। কার্পাস, কাপড়, ভেড়া, লাঙ্গল, ডোঙ্গা ইত্যাদি অস্ট্রিক শব্দ।

অনুমান করা হয় বাংলাদেশে বস্ত্র ও নৌশিল্পের সূচনাও হয়েছিল অস্ট্রিকের হাতেই। প্রাচীন বাংলায় পশ্চিমবঙ্গের—রাঢ় তাম্রলিপি, উত্তরবঙ্গের—পুণ্ড্র-বরেন্দ্র, দক্ষিণের—হরিকেল—বঙ্গ এবং সমতট অঞ্চলে জনবসতি ছিল। বিভিন্ন পর্যটকদের বর্ণনায় এবং ইতিহাসে এ সমস্ত জনবসতির বিবরণ পাওয়া যায়।
নিগ্রোবটু ও অস্ট্রিক জাতি গোষ্ঠীর পর বাংলায় আগমন ঘটে দ্রাবিড় জাতির। দ্রাবিড়রা নগর সভ্যতার পত্তন ঘটায়। এ সময় থেকেই বাংলায় সোনা, রূপা, ব্রোঞ্জ ও টিনের ব্যবহার দেখা যায়। প্রাচীন বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে এগুলোর নমুনা পাওয়া যায়।
বর্শা, ছুরি, কুঠার, তীর, ধনুক, বাঁটুল দ্রাবিড়দের হাতিয়ার। যব, গম, মাছ, মেষ, গরু, শুকরের মাংস ছিল এদের প্রধান খাদ্য। গরু, মোষ, হাতি, দ্রাবিড়দের গৃহপালিত পশু। দরজা-জানালা, দালান-কোঠা, রাস্তা-ঘাট দ্রাবিড়দের সময় থেকেই তৈরি হয়। অনুমান করা যায় দ্রাবিড়দের সময় থেকেই এদেশে বিভিন্ন অলঙ্কারের প্রচলন হয়। স্বর্ণকার, কর্মকার এসব পেশার উদ্ভব এ-সময় ঘটেছিল।
ইবনে বতুতা, টেভারনিয়ার প্রমুখের ভ্রমণ-কাহিনীতে বাংলাদেশে প্রচুর ধান হওয়ার কথা বলা হয়েছে। ওয়েস্টল্যান্ড তাঁর ভ্রমণ-কাহিনীতে বাংলাদেশের যশোর অঞ্চলে প্রচুর খেজুর গাছের বর্ণনা দিয়েছেন। টমাস বাউরে প্রাচীনকালে এ দেশে প্রচুর পরিমাণে চিনি, কার্পাস তুলা ও বস্ত্র, রেশম ও রেশমী বস্ত্র, লাক্ষা, মধু, মোম, লবণ, মরিচ, তেল, ছোলা ইত্যাদি উৎপন্ন হতো বলে উল্লেখ করেন।
অস্ট্রিক জাতি গোষ্ঠী এবং দ্রাবিড় সমাজই বাংলাদেশের প্রাচীনতম সমাজ। এরপর এদেশে আগমন ঘটে আর্যদের।
আরও দেখুনঃ