বাংলাদেশে বিদ্যমান কর্মক্ষেত্রসমূহ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় বাংলাদেশে বিদ্যমান কর্মক্ষেত্রসমূহ। আপনার নিজের ক্যারিয়ার তৈরিতে বাংলাদেশে বিদ্যমান কর্মক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরী।

বাংলাদেশে বিদ্যমান কর্মক্ষেত্রসমূহ

 

বাংলাদেশে বিদ্যমান কর্মক্ষেত্রসমূহ

 

বাংলাদেশে বিদ্যমান কর্মক্ষেত্রসমূহ

সময় গতিশীল। সময়ের এই গতিময়তার সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় সমাজ, পরিবর্তিত হয় আমাদের চারপাশ, কাজের পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট। আমাদের দেশের কর্মক্ষেত্রেও এসেছে অনেক পরিবর্তন । আজ থেকে চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগেও আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের পেশা ছিল কৃষিকাজ কিংবা কৃষিভিত্তিক শিল্পে শ্রম দেওয়া। আজ বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে ।

বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে কর্মক্ষেত্রে এসেছে ব্যাপক বৈচিত্র্য । আজকের দিনে আমাদের দেশে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে কী কী ধরনের কাজের সুযোগ আছে, কোন কোন পেশা গ্রহণ করা সম্ভব তা এই পাঠ থেকে আমরা জেনে নেব । পাশাপাশি, আমাদের জন্য ভবিষ্যতে কী ধরনের কাজের সুযোগ তৈরি হতে পারে, সে বিষয়েও জানার চেষ্টা করব ।

কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে গভীরভাবে জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন । তবেই আমরা স্বপ্ন ও আগ্রহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পেশা গ্রহণ করতে পারব ।

স্থানীয় পর্যায়

বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতি এদেশের প্রকৃতির মতোই বৈচিত্র্যময়। বাংলাদেশ সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে অনেকেই বলে থাকেন যে আমাদের দেশে স্থানীয় পর্যায়ে কাজের সুযোগ কম। কথাটা মোটেও সত্য নয় । বহুকাল থেকেই বাংলাদেশের সমাজ স্থানীয় পর্যায়ে অনেক পরিশীলিত ও বৈচিত্র্যময় কর্মক্ষেত্রের সমাবেশে ঐশ্বর্যশালী । প্রত্যেক গ্রামেই ছিল কুমার, চাষি, কামার, জেলে, ব্যবসায়ী, শিক্ষকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ।

তারা বংশপরম্পরায় ও নিজের আগ্রহের ভিত্তিতে পেশা নির্বাচন করতেন। নিজের মেধা, শ্রম ও ক্ষমতার সবটুকু উজাড় করে তারা গতিময় করেছিলেন দেশের অর্থনীতি। আমাদের চারপাশে এখনো ছড়িয়ে আছে সেসব পেশা। এসব পেশায় গিয়ে সুনাম অর্জনের সাথে সাথে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের সুযোগ রয়েছে ।

প্রয়োজন শুধু একটু চোখ মেলে দেখা, খানিকটা মেধা ও সৃজনশীলতা খাটিয়ে নতুন রূপে নিজের ভবিষ্যতকে সাজিয়ে নেওয়া । এবার আমরা স্থানীয় পর্যায়ে যে সকল পেশা গ্রহণের সুযোগ আছে, সেগুলো সম্পর্কে জেনে নিই ।

কৃষিকাজ

কৃষিকাজ পৃথিবীর আদিম পেশাগুলোর একটি । মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য বিশ্বের সকল দেশের মতো এদেশেরও কোটি কোটি কৃষক রাত-দিন শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন । অনেকেই কৃষিকাজকে হেয় করে দেখে, ভাবে এটা গুরুত্বহীন কাজ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কৃষিকাজ একটি দারুণ লাভজনক পেশা। আমেরিকা ও ইউরোপের অনেক দেশে, কৃষি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে ওইসব দেশের মানুষ নিজের গ্রামে ফিরে কৃষিকাজ করেন ।

তারা অবশ্য আমাদের মতো অসচেতনভাবে কৃষিকাজ করে না। তারা চাষ করে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে এবং তাদের ফলনও হয় অনেক বেশি। ফলে সেসব দেশ, তাদের অভ্যন্তরীণ খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে খাদ্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকেন। বাংলাদেশকে উন্নতির স্বর্ণশিখরে নিয়ে যেতে পারেন এদেশের কৃষকগণ ।

বাংলাদেশের মতো এমন উর্বর ভূমি পৃথিবীর খুব কম দেশেই আছে । কাজেই দেশের এখন প্রয়োজন আধুনিক কৃষক । আমরা কি হতে পারব আধুনিক কৃষক? আধুনিক কৃষক হতে হলে কী কী দক্ষতা প্রয়োজন, তা কি আমরা জানি? আধুনিক কৃষক হতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন শিক্ষা ।

শিক্ষিত না হলে কখন কোন ফসল চাষ করলে বেশি লাভ হবে, কীভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফসল চাষ করা সম্ভব, কী কী সার ব্যবহার করলে ফসল ভালো হবে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়। যারা শিক্ষিত নন, তারা বেশিরভাগ সময় সঠিক তথ্য সঠিক সময়ে জানতে পারেন না। শিক্ষিত না হলে, বীজ ও সার-এর প্যাকেটের গায়ে যে নিয়মাবলি লেখা থাকে তা পড়া সম্ভব হয় না।

যথাযথভাবে সেগুলো জমিতে ব্যবহার করাও তাদের জন্য কঠিন। কোনো শিক্ষিত মানুষ যখন কৃষিকাজ করেন, তখন তিনি চাষ সংক্রান্ত সকল বিষয় খতিয়ে দেখেন; লাভ-ক্ষতি ও তার সামর্থ্য বুঝে চাষের কাজে হাত দেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের কৃষি শিক্ষা বিষয় অধ্যয়নের সময় আধুনিক কৃষিকাজ সম্পর্কিত অনেক কিছু জানা যায়; পড়াশোনা জানলে অন্যান্য বই পড়েও শেখা যায় ।

শিক্ষিত চাষি জৈব সার তৈরি করে চাষের খরচ অনেক কমিয়ে আনতে পারেন। একই সাথে পারেন সঠিক পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অধিক ফলন । নিত্য-নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে কাজ যেমন সহজ হয়ে যায়, তেমনি দ্রুত অনেক কাজ সম্পন্ন করা যায় । আধুনিক কৃষকগণ এ থেকে বিস্তর মুনাফা করতে পারেন । সবজি চাষ করে অনেকেই আজ আর্থিক স্বচ্ছলতার সাথে জীবনধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন । আমরা কি তেমন কেউ হতে চাই?

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

পশু-পাখি পালন

পশুপালন কৃষিকাজের মতোই পুরনো একটি পেশা। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পশুপালন খুবই লাভজনক । বাংলাদেশের জমি খুব উর্বর । এখানে জমি পতিত রাখলেও তাতে প্রচুর ঘাস জন্মায় । এছাড়াও অতি সহজেই এসব জমিতে পশু-পাখির খাদ্য উৎপাদন করা যায়, যা বিশ্বের অনেক দেশেই সম্ভব নয়। বিশ্বের অনেক দেশের জলবায়ু খুবই ঠাণ্ডা- প্রায়ই বরফ পড়ে। সেসব দেশে পশু-পাখি পালন করা খুবই কঠিন ।

অথচ বাংলাদেশে যেমন বরফও পড়ে না, তেমনি মরুভূমির মতো খুব গরমও নেই । নাতিশীতোষ্ণ এই জলবায়ু পশু-পাখি পালনের জন্য অতি উত্তম। প্রয়োজন শুধু সচেতনভাবে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পশু-পাখি পালন করা। তোমরা চাইলে অনেকেই আধুনিকভাবে পশুপাখি পালন করতে পার ।

মাত্র সাড়ে চার থেকে পাঁচলাখ টাকা খরচ করে ১০টি উন্নতজাতের দুগ্ধবতী গাভী বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পালন করে প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা অর্থাৎ বছরে একুশ থেকে বাইশ লক্ষ টাকা উপার্জন করা সম্ভব । খুব অবাক লাগছে তাই না? এসো হিসাব করে দেখি-

উন্নত জাতের একটি গাভী প্রতিদিন ১০-১৫ লিটার দুধ দেয় । মনে কর, তোমাদের গরু দৈনিক গড়ে ১২ লিটার দুধ দেয় । তোমার এমন ১০টি গরু রয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতিলিটার দুধের দাম ৫০ টাকা । তাহলে ১০টি গরুর দৈনিক দুধের পরিমাণ ১২০ লিটার। সুতরাং দৈনিক আয় হবে ৬,০০০ টাকা। এভাবে মাসে অর্থাৎ ৩০ দিনে আয় হবে ১,৮০,০০০ টাকা।

আবার এই গাভীগুলো নিয়মিত বাচ্চা প্রসব করবে। সেগুলো বিক্রি করেও অনেক টাকা পাওয়া সম্ভব । একই রকম লাভ করা যায় পাখি (যেমন- হাঁস, মুরগি, কবুতর, কোয়েল ইত্যাদি) লালন পালন করে। তবে সব ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে লালনপালন করতে হবে; অন্যথায় এমন লাভ করা সম্ভব হবে না। আর বিজ্ঞানসম্মতভাবে পালন করতে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে হবে ।

স্থানীয় উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানে চাকরি

বাংলাদেশে অনেক এনজিও রয়েছে যেগুলো স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে । এ সকল এনজিওতে চাকরি করলে একদিকে যেমন নিজের নিয়মিত উপার্জন হয়, তেমনি দেশের ও সমাজের মানুষের উন্নয়নের জন্যও ভূমিকা রাখা যায় ।

এ সকল উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান সমাজের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পশুপালন, মাছচাষ, শিশু ও নারী অধিকার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, শিশুদের সুরক্ষা ইত্যাদি নানা বিষয়ে কাজ করে থাকে । এ সকল প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে হলে একদিকে যেমন ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হতে হয়, তেমনি পেশাগত যোগাযোগ ও দক্ষতা অর্জন করতে হয় ।

স্থানীয় কারখানায় চাকরি

প্রত্যেক এলাকায় বিশেষ ধরনের কিছু কলকারখানা থাকে । যেমন চট্টগ্রামে জাহাজ ভাঙা শিল্প, নারায়ণগঞ্জে লঞ্চ তৈরি ইত্যাদি । আমরা এ সকল কারখানায় চাকরি করেও জীবিকা নির্বাহ করতে পারি । আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, এ সকল কারখানায় বেতন কম । ভালো করে খোঁজ নিলে দেখবে, এ সকল কারখানায় শুধু অদক্ষ শ্রমিকদের বেতন কম । যারা ওই সকল কারখানার বিভিন্ন কাজে দক্ষ, তারা কিন্তু বেশ ভালো উপার্জন করে থাকে।

ভিন্ন ভিন্ন কারখানার জন্য ভিন্ন ভিন্ন রকম দক্ষতার প্রয়োজন । আমাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা সম্পর্কে জানতে হবে এবং চাকরির আবেদন করার আগেই সে বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে । যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকার অনেক ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটসমূহেও নানা রকম দক্ষতা অর্জনের সুযোগ রয়েছে ।

যথাযথ পরিকল্পনা করে আমাদের সামনে অগ্রসর হতে হবে। দক্ষ ও পরিশ্রমী হলেই অনেক ছোট পরিসরে ক্যারিয়ার শুরু করেও অনেক বড় হওয়া যায়, অনেক সুনাম অর্জন করা যায় ।

স্থানীয় পরিসরে ব্যবসায়

পৃথিবীর সেই আদিকাল থেকেই ব্যবসায় একটি সম্মানজনক পেশা। ব্যবসায় ছোট-বড় বিভিন্ন পরিসরে করা যায়, বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ব্যবসায় করা যায়। আগ্রহ, দক্ষতা ও পুঁজির উপর নির্ভর করে নানা রকম ব্যবসায় করা সম্ভব। আমাদের দেশে অধিক প্রচলিত স্থানীয় পর্যায়ের ব্যবসায় সমূহের মধ্যে রয়েছে কাঁচামালের ব্যবসায়, ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়,

 

বাংলাদেশে বিদ্যমান কর্মক্ষেত্রসমূহ

 

পোশাক ও কাপড়ের ব্যবসায়, ফলমূল ও শাক- সবজির ব্যবসায়, মাছের ব্যবসায়, মুদি পণ্যের ব্যবসায়, যানবহন ও পরিবহণের ব্যবসায় ইত্যাদি। যে ব্যবসায়ই করা হোক না কেন, যদি তা সততা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের সাথে করা যায় তবে তাতে উন্নতি হবেই ।

আরও দেখুন : 

Leave a Comment