আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ভালো শ্রোতা হওয়ার কৌশল
Table of Contents
ভালো শ্রোতা হওয়ার কৌশল
উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা
একজন গুণী মানুষ যেমন উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজ শুরু করেন না, তেমনি একজন ভালো শ্রোতাও গঠনমূলক কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া কোনো কথায় কর্ণপাত করেন না । একজন ভালো শ্রোতা শোনার আগেই ঠিক করে নেন, কী কী তথ্য তার প্রয়োজন এবং কীভাবে সেই সকল তথ্য তিনি মনে রাখবেন । মনে রাখার জন্য একজন ভালো শ্রোতা বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করে থাকেন;
যেমন মুখ্য শব্দ মনে রাখার কৌশল (এক্ষেত্রে শ্রোতা মুখ্য শব্দসমূহ মনে রাখেন এবং প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জ্ঞান হিসেবে তার পূর্বে শেখা বিষয়ের সাথে একীভূত করে নেন)। তবে, অধিক তথ্যের ক্ষেত্রে শ্রোতা সেগুলোকে নোট করে বা টুকে নেয় । শোনার আগেই যদি উদ্দেশ্য ঠিক করে নেওয়া যায়, কিংবা কী কী তথ্য জানা প্রয়োজন তা ঠিক করে নেওয়া যায় তবে শোনা তথ্য মনে রাখা সহজ হয় ।
মনোনিবেশ করা
ভালো শ্রোতা হতে হলে অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। কোনো কিছু মনোযোগ দিয়ে শোনা সহজ ব্যাপার নয়; এজন্য অনুশীলন ও চেষ্টার প্রয়োজন । অনেকের ক্ষেত্রেই কখনো কখনো কারো কথা বা বক্তব্যের প্রতি মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকে আবার খুব দ্রুত অন্যের বক্তব্যের গভীরে মনোনিবেশ করতে পারেন । এ জন্য চেষ্টা ও অনুশীলন প্রয়োজন ।
মানসিক ও শারীরিকভাবে স্থির থাকা
ভালো শ্রোতা হতে হলে কোনো কিছু শোনার সময় মানসিক ও শারীরিকভাবে স্থির থাকতে হবে । কেউ যখন কথা বলেন বা বক্তব্য প্রদান করেন, তখন অনেকেই বিভিন্ন রকম কাজ করেন, নানা রকম চিন্তা-ভাবনা করেন । এ রকম অবস্থায় মনোযোগ দিয়ে শোনা যায় না । কাজেই মনোযোগী শ্রোতা হতে হলে কোনো কিছু শোনার সময় অবশ্যই আগ্রহ থাকতে হবে এবং মানসিক ও শারীরিকভাবে স্থির থাকতে হবে ।
চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা
আমাদের দেশে গুরুজনদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা বা কথা শোনাকে অনেকেই অভদ্রতা মনে করে থাকেন । কিন্তু কোনো কিছু মনোযোগ দিয়ে শোনার ক্ষেত্রে চোখের মাধ্যমে যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রোতা বক্তার চোখের দিকে তাকিয়ে অনেক কিছুই অনুমান করতে পারেন; বিষয়বস্তুর গভীরে গিয়ে মানসিক যোগাযোগ তৈরি করতে পারেন । ফলে, শোনা বিষয়টি অনেক অর্থবহ হয় ।

কথার মাঝে কথা না বলা
অন্য কেউ যখন কথা বলেন, তখন আমাদের কথা বলা উচিত নয় । কেউ কথা বলার সময় যদি আমরা কথা বলি, তবে একদিকে আমরা যেমন তার কথা ভালোভাবে শুনতে পারি না; তেমনি তিনিও আমাদের কথা শুনতে পারেন না । কাজেই মনোযোগী শ্রোতা হতে হলে অন্যরা যখন কথা বলেন তখন নিজে নিশ্চুপ থেকে তার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। একজনের কথা বলা শেষ হলে তারপর নিজে কথা বলতে হবে ।
এ সকল উপায় আমরা যদি নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে আমাদের আচরণে পরিণত করি, তবেই আমরা ভালো শ্রোতা হয়ে উঠতে পারব। জীবনে বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করার জন্য ভালো শ্রোতা হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
ব্যক্তিগত আচরণ
ব্যক্তিগত আচরণ কার্যকর সংযোগ স্থাপনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ক্যারিয়ারে সফলতা অর্জনে ব্যক্তিগত আচরণের গুরুত্ব অনস্বীকার্য । কিন্তু ব্যক্তিগত আচরণ বলতে আসলে কী বোঝায়? ব্যক্তিগত আচরণ হলো- আমাদের আবেগ, অনুভূতি ও মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে চাইলে আমাদের ব্যক্তিগত আচরণ অবশ্যই পরিশীলিত হতে হবে; আমাদের ব্যক্তিগত আচরণ এমন হতে হবে যা অন্যের নিকট কেবল গ্রহণযোগ্যই নয়, বরং প্রশংসার দাবিদার ।
এসো একটি ঘটনা যাচাই করি- হাসান আলি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় ফিল্ড সুপারভাইজার পদে চাকরি করেন । তার দায়িত্ব হলো মাঠকর্মীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং তাদের কাজের সমন্বয় সাধন করা। একবার একজন মাঠকর্মীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠল । হাসান আলি সাহেব এই দুর্নীতির বিষয়ে অবগত হয়ে তার সত্যতা যাচাই করে দেখলেন । অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিনি ঐ মাঠকর্মীকে ডাকলেন এবং কেন দুর্নীতি করেছেন- তা ব্যাখ্যা করতে বললেন।
অভিযুক্ত মাঠকর্মী ইনিয়ে-বিনিয়ে তার অভাব ও নানা সমস্যার কথা বলতে লাগলেন । হাসান আলি আবেগের বশবর্তী না হয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিলেন । ফলে আর কোনো মাঠকর্মী বা অন্য কোনো কর্মী কোনো রকম দুর্নীতিতে জড়ালেন না। এতে একদিকে যেমন সৎ কর্মকর্তা হিসেবে হাসান আলি সাহেবের সুনাম ছড়িয়ে পড়ল, তেমনি সংস্থার ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হলো ।
তিনি যদি দুর্নীতিবাজ কর্মীর বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা না নিতেন, তবে হয়তো ঐ অভিযুক্ত মাঠকর্মী আরও বড় ধরনের দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়তেন। এতে একদিকে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতো, অন্যদিকে স্থানীয় জনগণও ক্ষতির সম্মুখীন হতো । এ তো গেল, কর্মজীবনের কথা। কিন্তু কর্মজীবনে প্রবেশের আগেও আবেগ, অনুভূতি ও মনোভাবের পরিশীলিত অনুশীলন প্রয়োজন ।
আরও দেখুন :