আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ময়রা বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।
ময়রা বাংলাদেশের পেশাজীবী
প্রাচীন বাংলায় মিষ্টি তৈরি করতো ময়রারা। ময়রার হাতে তৈরি মিষ্টির স্বাদই ছিল আলাদা। ময়রা মূলত চিনি বা মিষ্টিজাত দ্রব্যের কারবারি। ময়রা নাড়ু এবং মুড়ির মোয়া বানিয়ে নগরে বিক্রি করতো। আগেকার দিনে ময়রার তৈরি নারকেলের মিষ্টি সবার প্রিয় ছিল।
মিষ্টি মুখ করানো বাংলার প্রাচীন রেওয়াজ। অতিথি আপ্যায়নে, বিয়ে শাদীতে, আনন্দ অনুষ্ঠানে মিষ্টি ছাড়া চলেই না। বাংলার ময়রাদের তৈরি মিষ্টি ছিল সবার লোভনীয়। বাংলাদেশে ময়রাদের হাতে তৈরি রসগোল্লা, পানতোয়া, বুন্দে, ছানার সন্দেশ, চমচম, রসমালাই, দানাদার, আমিত্তি, জিলাপী অত্যন্ত মুখরোচক ও সুস্বাদু।
বাংলায় প্রাচীনকাল থেকেই ময়রা সম্প্রদায় ছিল। ময়রা হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। বৃহদ্ধর্ম পুরাণে ময়রাকে ‘উত্তম সংকর’ পর্যায়ভুক্ত করা হয়েছে। মফস্বল শহরে, গঞ্জে, হাটে, বন্দরে যারা মিষ্টি তৈরি এবং বিক্রি করতো তারা ময়রা হিসেবে পরিচিত।
বাংলায় ময়রাদের অবস্থান দীর্ঘদিনের। গ্রামীণ সমাজে ময়রা সুপরিচিত। এরা সমাজে মোদক বা হালুইকর নামেও পরিচিত। বিজয়গুপ্ত ও ভারতচন্দ্র তাঁদের কাব্যে মোদক সম্প্রদায়কে ‘কুরী” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মুকুন্দরাম তাঁর কাব্যে ময়রাদের কাজের এরূপ বিবরণ দেন-
মোদক প্রধান রানা,করে চিনি কারখানা
খণ্ড নাড়ু করয়ে নির্মাণ
পশরা করিআ শিরে,নগরে নগরে ফিরে
শিশুগণ ধরয়ে জোগান।
ময়রা রসগোল্লা, গজা, বাতাসা, কদমা, জিলিপি, দৈ, রসমালাই, ছানা, বুন্দে প্রভৃতি মিষ্টি তৈরি করে। ময়রা এগুলো নিজ বাড়িতেই তৈরি করতো। কখনো মিষ্টির দোকানের এক পাশেই এগুলো তৈরি করে থাকে। ময়রার মিষ্টি বেশ জনপ্রিয়।
বাংলার পূজাপার্বণে আনন্দ অনুষ্ঠানে বিয়েতে ফাতেহায় ময়রা তৈরি মিষ্টি খাওয়ানো হতো। গ্রামের মেলা, আনন্দ অনুষ্ঠানে ময়রারা মিষ্টি বিক্রি করতো। এখন মিষ্টির ব্যবসা আর ময়রার হাতে খুব একটা নেই। বর্তমানে শহরগুলোতে বিত্তবানেরা মিষ্টির দোকান খুলেছে। ময়রারা এ সমস্ত দোকানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। বর্তমানে এদের অনেকে পেশার পরিবর্তন করেছে।
আরও দেখুনঃ