ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন মানুষের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন মানুষের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি

ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন মানুষের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি

 

ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন মানুষের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি

 

ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন মানুষের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি

মানুষ তার অজান্তেই চারপাশের মানুষ দ্বারা প্রভাবিত হয়। অন্যকে মানুষ অনুকরণও করে। এ কারণে ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন মানুষের সাথে মেলামেশা করলে তার প্রভাব পড়বে। আর নেতিবাচক মনোভাবাপন্ন মানুষের সাথে মিশলে দৃষ্টিভঙ্গিও নেতিবাচক হবে । তাই সবসময় ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন মানুষের সাথে মেশা উচিত ।

অন্যদের অক্ষমতা সহজভাবে নেওয়া

সবার কাজ করার ক্ষমতা একই রকম হয় না । যেভাবে তুমি একটি কাজ করতে পারতে ঠিক সেভাবে অন্য কেউ নাও করতে পারে, তাই এটি নিয়ে মন খারাপ করা বা কারও সাথে তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা বা খারাপ মন্তব্য করা ঠিক নয় । এটা এক ধরনের হীনমন্যতা ।

অন্যের কাজের প্রশংসা করা

কৃতজ্ঞতাবোধ তৈরি হবে তখনই যখন তুমি জীবনের ছোট ছোট দুঃখ-কষ্টগুলোকে সরিয়ে প্রাপ্তিগুলোকেই বড় করে দেখবে। অন্যদের দেওয়া উপহারগুলোর জন্য হাসিমুখে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। অন্যকে তাদের কাজের প্রশংসা করতে ভুলবে না ।

কর্মে সফলতায় মূল্যবোধ

আমরা জেনে অবাক হবো যে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন একটি অফিসের কেরানি হিসাবে । সেই আলবার্ট আইনস্টাইনের একটি উক্তি থেকেই বোঝা যায় কর্মে সফলতায় মূল্যবোধ কতটা জরুরি। আইনস্টাইন আমাদেরকে কেবল সফলতার পেছনে না দৌড়িয়ে, মূল্যবোধ অর্জন করতে বলেছেন।

মূল্যবোধই একজন মানুষকে প্রকৃত কর্মে সফলতা এনে দিতে পারে সকলের নিকট সম্মানীয় একজন মানুষ হিসেবে সমাজে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। প্রবাদে আছে- “দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য” । আইনস্টাইনের কথায় কিংবা বাংলা প্রবাদে কেন মূল্যবোধকে এতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কীভাবেই বা মূল্যবোধ আমাদের কর্মে বা কর্মক্ষেত্রে সফল হতে সাহায্য করে, সে বিষয়ে আমরা জানব ।

কর্মক্ষেত্রে মূল্যবোধের কতগুলো ক্ষেত্র নিয়ে আমরা আলোচনা করব-

নির্ভরশীলতা ও আস্থা :

কর্মক্ষেত্রে আমাদের দলগত কাজ করতে হয়। দলগত কাজের ক্ষেত্রে একজনকে অন্যজনের উপর নির্ভর করতে হয়। আমরা তাদের সাথেই দলগত হয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি যাদের উপর আমরা আস্থাশীল হতে পারি, যাদের কোনো কাজ বা দায়িত্ব দিয়ে তাদের উপর আমরা নির্ভর করতে পারি।

তোমরা খেয়াল করলে দেখবে- তাদের সাথেই তোমাদের বন্ধুত্ব হয়, যাদের তোমরা বিশ্বাস করো; যাদের আচার-আচরণ, ভাবনা-চিন্তা, স্বভাব তোমাদের ভালো লাগে; যাদের উপর তোমরা নির্ভর করতে পারো। কর্মক্ষেত্রও এর থেকে আলাদা নয় । কর্মক্ষেত্রেও সবাই তাদের সাথে দল গঠন করতে চায়, যারা দক্ষ এবং যাদের মূল্যবোধ উন্নত, সর্বোপরি যাদের উপর কোনো দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া যায় ।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

সততা :

ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে যেমন সততা অমূল্য, তেমনি কর্মক্ষেত্রেও এর মূল্য অপরিসীম । সবাই সৎ লোকের সহকর্মী হতে চায়, সৎ লোককে কোনো কাজ বা চাকরি দিতে চায়। যারা অসৎ, তাদের সবাই ঘৃণা করে, সবাই তাদের থেকে দূরে থাকতে চায় । চাকরিদাতা বা নিয়োগকর্তাদের যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একজন চাকরি-প্রার্থীর সততা অনেক বড় ভূমিকা পালন করে ।

আজকাল চাকরিদাতাগণ অত্যন্ত সচেতন এবং তারা চাকরি-প্রার্থীদের সততার মাত্রা নির্ধারণে বিশেষভাবে দক্ষ। কাজেই কারও যদি মনের ভেতর অসততা থাকে তবে চাকরিদাতাগণ তা সহজেই অনুধাবন করতে পারেন। ওই চাকরি-প্রার্থী যতই দক্ষ হোক না কেন তাকে চাকরিতে নিয়োগ দেন না। ব্যবসার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য; কেউই অসৎ ব্যবসায়ীদের সাথে লেনদেন করতে চায় না।

নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা :

প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেই কিছু নিয়ম-কানুন আছে। কর্মক্ষেত্রে সফল হতে হলে আমাদের অবশ্যই ঐ সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা উন্নত মূল্যবোধের অংশঃ একজন উন্নত মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ সব সময় নিয়মানুবর্তী ও সুশৃঙ্খল হয়ে থাকেন। তিনি যে সমাজে বাস করেন, যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, সেই সমাজ ও প্রতিষ্ঠানের সকল নিয়ম-কানুন তিনি মেনে চলার চেষ্টা করেন ।

সময়ানুবর্তিতা :

কর্মক্ষেত্রে সময়ানুবর্তিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের কাজ সমরে করা খুবই জরুরি। এ কথার উপলব্ধি রয়েছে লালনের গানে- ‘সময় গেলে সাধন হবে না। কর্মক্ষেত্রে সবাই দলগতভাবে কাজ করে। একজন যদি সময়মতো কর্ম সম্পাদন না করে, তাহলে সে জন্য সকলেই বিপদে পড়তে পারেন। এ ছাড়া সময় মতো অফিসে যাওয়া, কিংবা সময়মতো ব্যবসার কাজ শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো প্রতিটি কাজ শেষ করতে পারলে সফলতা অর্জন করা সহজ হয়ে যায়।

পারস্পরিক সহমর্মিতা ও বিশ্বাস :

কর্মক্ষেত্রে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও বিশ্বাস ছাড়া কাজ করা সম্ভব নয়। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের মধ্যে যদি পারস্পরিক সহমর্মিতা ও বিশ্বাস না থাকে, তবে তারা সৃজনশীল কোনো কর্ম সম্পাদন করতে সক্ষম হবে না। এছাড়া, দলবদ্ধ হয়ে কাজের ক্ষেত্রে দলের সবাইকে দায়িত্ব নিতে হয়; কোথায় কারও দুর্বলতা থাকলে নিজে এগিয়ে গিয়ে তাকে সহায়তা করা উচিত।

ফ্যারিয়ার গঠনে ব্যক্তিগত আচরণ

 

ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন মানুষের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি

 

ক্যারিয়ার গঠনে ব্যক্তিগত আচরণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । কেননা, তোমার ভেতরে কী আছে তা প্রকাশ পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো তোমার আচরণ। কোনো মানুষ সৎ না অসৎ তা আমরা তার আচরণের মাধ্যমেই বুঝতে পারি । বদমেজাজি ব্যক্তিকে আমরা পছন্দ করি না । কারণ, তার আচরণ আমাদের স্বস্তি দেয় না । বরং বিরক্তির উদ্রেক করে । পেশাগত জীবনে ভালো করার জন্য আচরণ সংযত ও ভদ্র হওয়া প্রয়োজন ।

অন্যথায় খুব বেশি দূর এগোনো সম্ভব নয়। শুধু ব্যক্তিগত সদাচরণ দিয়ে অনেক সাধারণ মানুষ অসাধারণ সব পদে কাজ করে চলছেন, ছোট উদ্যোক্তা থেকে বিশাল শিল্প-কারখানার মালিক হয়েছেন। ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত আচরণ মার্জিত ও উপযুক্ত হওয়া প্রয়োজন । নতুবা, কর্মজীবনের কোনো না কোনো সময়ে সমস্যা হবে, বাধা আসবে ।

আমাদের মন-মানসিকতা, অভ্যাস, বদভ্যাস সবই প্রকাশ পায় আচরণের মধ্য দিয়ে। ‘অভদ্রভাবে কথা বলে এমন কাউকে কোনো প্রতিষ্ঠানই চাকরি দিতে চাইবে না। বরং বিনয়ী এবং ভদ্র কাউকেই মানুষ চাকরি দিয়ে থাকেন । চাকরি, ব্যবসায় ইত্যাদি পেশাগত জীবন গঠনে যে সকল ব্যক্তিগত আচরণ সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে তা হলো:

  • বিনয়ী, নম্র, ভদ্র, পরিচ্ছন্ন ;
  • সময়ের ব্যাপারে সচেতন এবং কথা ও কাজের মধ্যে মিল;
  • ঊর্ধ্বতন এবং অধস্তন উভয় সহকর্মীদের সাথে বিনয়ী হওয়া;
  • জটিল পরিস্থিতিতে রেগে না যাওয়া বা বিরক্তি প্রকাশ না করা বরং হাসিমুখে ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া;
  • চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় কিংবা নিজ প্রতিষ্ঠানে কোনো গ্রাহকের সামনে ঔদ্ধত্য প্রকাশ না করা;
  • জনসম্মুখে ব্যক্তিগত কাজ না করা;
  • বিপরীত জেন্ডারের সহকর্মীদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে অধিক সতর্কতা অবলম্বন;
  • সবার সাথে হাসিমুখে আন্তরিকতার সাথে কথা বলা;
  • কোনো সমস্যায় পড়লে সরাসরি সহকর্মীদের সহায়তা চাওয়া এবং তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান বজায় রাখা;
  • নিজের অপারগতা সহজভাবে প্রকাশ করা; তবে চেষ্টা না করেই প্রথমে অপারগতা প্রকাশ না করা;
  • ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভয় না পেয়ে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখা
  • নিজের ব্যক্তিগত সমস্যার কথা সবসময় সবার কাছে না বলা;

সৃজনশীল প্রশ্ন

নুসরাত জাহান বাংলাদেশের ছোট্ট একটি শহরের মেয়ে । লাজুক স্বভাবের মেয়ে নুসরাত কারো দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারেন না। একটি কলেজ থেকে তিনি মনোবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছেন । নুসরাত বেশ বুদ্ধিমতী; তিনি যা করেন তা খুব মনোযোগ দিয়ে করেন। সফল হওয়ার জন্য তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে প্রস্তুত। তিনি বেশ কয়েকটি চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন যেগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে সাক্ষাৎকার ও লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার চাকরি হয়নি।

চাকরি না হওয়াতে নুসরাতের মন খারাপ হলেও, ভেঙে পড়েননি । বরং তিনি চাকরি না হওয়ার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। নুসরাতের মনে হয়েছে যে, অন্য প্রতিযোগীর তুলনায় ইংরেজি ও কম্পিউটার ব্যবহারে তিনি দুর্বল । তাছাড়া সাক্ষাৎকারের সময় আচরণের একটি দুর্বল দিকও তার মনে পড়ে ।

ক. মনোভাব কী ?

খ. সততা বিষয়টি ব্যাখ্যা করো।

গ. সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় নুসরাতের আচরণের দুর্বল দিকটি বর্ণনা করো।

ঘ. প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নুসরাতের দুর্বলতাটি কি সত্যিই একটি দুর্বলতা- বিশ্লেষণ করো।

আরও দেখুন : 

Leave a Comment