আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মালাকার বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।
মালাকার বাংলাদেশের পেশাজীবী
বিভিন্ন আনন্দ উৎসবে, গ্রামীণ মেলায়, কাগজের এবং ফুল শোলার বিভিন্ন খেলনা পাওয়া যেতো। বাংলাদেশের জলাভূমিতে এক প্রকার কোমল জলজ গাছ জন্মে। এর নাম শোলা, ভাত শোলা বা ফুল শোলাও বলা হয়। গাছটির ইংরেজি নাম ইন্ডিয়ান কর্ক।
কাইত নামক অত্যন্ত ধারালো দাও দিয়ে এগুলো কাটা হয়। এ সমস্ত শোলা দিয়ে প্রাচীন কাল থেকেই নানা রকম সামগ্রী তৈরি করা হতো। যারা শোলা থেকে এ সমস্ত দ্রব্যাদি তৈরি করে তারা মালাকার হিসেবে পরিচিত।
মালাকার আর্য সম্প্রদায়ের বর্ণ বিভাগে নিচু জাতের হিন্দু। এদের বৃত্তি নির্ধারণ হয়েছে মালা তৈরি করা। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ক্ষুদ্র দু’একটি সম্প্রদায়ের মধ্যে এ কাজটি সীমিত। যার ফলে মালাকার সম্প্রদায় ছাড়া শোলার কাজগুলি এখনও অন্যেরা আয়ত্ত করতে পারেনি।
চট্টগ্রাম, নওগাঁ, যশোর, শালিকা, কোটচাদপুর, নড়াইল অঞ্চলের কয়েকটি পরিবারের মধ্যে বংশ পরম্পরায় এ-কারিগরি প্রথা প্রচলিত রয়েছে। শোলার তিন ধরনের কাজ হয়। শোলার সাদা অংশ কেটে ফুল, পুতুল, বিয়ের মুকুট প্রভৃতি তৈরি করা।
শোলাকে পাতলা তকতার মতো কেটে তা একসাথে জুড়ে অথবা তার ওপর কাগজ লাগিয়ে কারাণ্ডি চিত্র আঁকা। শোলার পাতলা পাত বা তক্তার ওপর পোড়ামাটির সাচ দিয়ে এসব করা হয়। শোলা দিয়ে মালাকাররা তৈরি করে ছোট আকারের মূর্তি।
মালাকাররা মূর্তির পেছনের চালী বা চালচিত্র, মূর্তির মাথার মুকুট, মূর্তির অলঙ্কার, মালা, কালী ও লক্ষ্মীপূজার কপালী, কদম ফুলের মাঙ্গলিক এবং মনসা পূজার মেড় তৈরি করে থাকে। মালাকাররা শোলা দিয়ে বিভিন্ন খেলনা তৈরি করে থাকে। শোলার তৈরি ময়ূর, কাকাতুয়া, টিয়া, হাতি, বানর, কুমীর, ফুল, কদম ফুলের মালা প্রভৃতি প্রস্তুত করে।
হিন্দুদের বিয়ের মুকুট, টায়রা বা কপালী এবং অলঙ্কারও মালাকারেরা শোলা দিয়ে তৈরি করে থাকে। মন্দিরের চূড়ার আকৃতিতে তৈরি বরের মুকুট এবং রাজরাণীর মাথার চূড়ার অনুকরণে কর্ণের টায়রা বা কপালী তৈরির কাজে মালাকারদের দক্ষতা ও শিল্পীর কল্পনার নিদর্শন পাওয়া যায়।
মালাকাররা যে সমস্ত খেলনা, মূর্তি, পুতুল তৈরি করে সেগুলোতে বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে নিয়ে গোলাপী, সবুজ, হলুদ এবং নীল রঙ ব্যবহার করে থাকে। শোলার টুকরা ও পাতি সলা জুড়ে তার ওপর গোলাপী ও সবুজ রঙ দিয়ে তৈরি হয় মহররমের ছেরাশিণী। মালাকারদের পেশা প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে এখনও নওগাঁ, আত্রাই, সালিকা, কোটচাদপুর, চট্টগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে সীমিত পরিবারে মালাকার সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে।
মালাকাররা তাদের তৈরি জিনিসপত্র বিভিন্ন মেলায় বিক্রি করে থাকে। শহর বন্দর গঞ্জের কোনো কোনো দোকানে এদের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করা হয়ে থাকে। মালাকারদের তৈরি সৌখিন পুতুল, জীব-জন্তুর প্রকৃতি ঘরের শোভা বর্ধনের কাজ করে। মালাকারদের পেশা বিলুপ্তির পথে।
আরও দেখুনঃ