আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মালিনী বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।
মালিনী বাংলাদেশের পেশাজীবী
মালিনী বলতে ফুলের বাগান, ফুল, ফুল সংগ্রহ, মালা গাঁথা, মালা সরবরাহ করা ইত্যাদি কাজের সাথে জড়িতদের বুঝায়। সম্ভবত মোগল শাসন আমলেই এদেশে ‘মালিনীদের উদ্ভব ঘটে। মালিনীর প্রধান কাজ ফুল সংগ্রহ করা।
সংগৃহীত ফুল দিয়ে মালা গাঁথা বা ফুলের পসরা সাজিয়ে তা সরবরাহ করা। প্রধানত সেকালে রাজ-রাজড়া ও জমিদারদের সুবেদারদের মনরঞ্জন ও মনতুষ্টের জন্য মালিনের ব্যবহার করা হতো।
মালিনীরা বাগান বা গাছ থেকে ফুল সংগ্রহ করে রাজা-বাদশা জমিদারদের, রাজকুমার/রাজকুমারীদের মনতুষ্টের জন্য প্রতিদিন তা সরবরাহ করত। মালিনীরা রাজা-বাদশা বা জমিদারদের আবাসস্থলের আশেপাশেই বাস করত।
ফুলের মালা বা পসরার বিনিময়ে রাজা-বাদশা-জমিদাররা মালিনীদের অর্থকড়ি দিয়ে সাহায্য করত। এছাড়াও মালিনীরা পূজা-পার্বণ-বিবাহ অনুষ্ঠানাদিতে ফুল সরবরাহ করে জীবিকা নির্বাহ করত। রাজকুমারী বিদ্যার মনোরঞ্জনের জন্য হীরা মালিনীকে নতুন নতুন নকসার ফুলের পসরা উপহার দিতে হতো।
কালিকা মঙ্গল কাব্যে যে কয়টি প্রধান নারী চরিত্র রয়েছে মালিনী এদের অন্যতম। কবি মালিনীকে বিদ্যা ও সুন্দরের জীবনে গোপন প্রণয়নের প্রধান সাক্ষী ও অনুঘটক হিসেবে উপস্থিত করেছেন। মালিনীর ছাড়াও দুধ বিক্রির কথা বলেছেন বলরাম কবি শেখর –
নগরে পসারি সব আছে সারি সারি।
আপন ইৎসায় সভে বেচাকেনা করি।
দেখিলা মালিনী বৃক্ষ তলে ফুল বেচে।
দুধ না বিকায় সেই একাকিনী আছে ।
রাম প্রসাদ সেন ‘কালিকা মঙ্গলকাব্যে পতি পুত্রহীন মালিনী হীরাবতীকে এভাবে উপস্থাপন করেন-
হীরাবতী নাম ধরি বাসে বঞ্চি একেশ্বরী
পতিপুত্র কন্যা হেক নাই।
উদর উপায় মূল রাজকন্যা লয় ফুল
যাতায়াত নিত্য সেই ঠাই ৷৷
দৌলৎ কাজী রচিত ‘সতী ময়না-লোর চন্দ্রানী’ কাব্যের মালিনীর নাম রত্না। কবি রত্না মালিনীর স্বভাব চরিত্র বিশ্লেষণ করে এভাবে-
মালিনীর লাস ভেশ কি কহিমু সবিশেষ
কুলটা বিখ্যাত প্রবঞ্চক
মধুরস স্থাল তুণ্ড হৃদয় গরল কুণ্ড
কপট মন্ত্রণা দমনক ।
প্রাচীন বাংলার জমিদার/সুবেদার তাদের দরবারের বা তাদের খাস মহলে ফুল দেয়ার জন্য মালিনীরা নিয়োজিত থাকতো। মালিনীরা জমিদার/সুবেদারদের নিকট থেকে বিশেষ দান পেতো। অনেক সময় এরা জমিদার/সুবেদারদের মনোরঞ্জনও করতো।
আরও দেখুনঃ