আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় রাখাল বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।
রাখাল বাংলাদেশের পেশাজীবী
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। গ্রামের অধিকাংশ মানুষই কৃষিজীবী। কৃষির সাথে জড়িত গরু, মহিষ। বাংলার গ্রামীণ জীবনে অবস্থা সম্পন্ন কৃষক পরিবারে গরু-মহিষ-ছাগল পালনের জন্য রাখালের উপস্থিতি ছিল।
এদেশের কৃষি ব্যবস্থার সাথে রাখালের সম্পর্ক প্রাচীনকাল থেকেই। বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থা লাঙল বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে।লাঙ্গল টানার জন্য প্রয়োজন গরু, মহিষের। আর গরু মহিষ রাখার জন্য প্রয়োজন রাখালের।
বাংলাদেশের একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে—আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। প্রাচীনকাল থেকেই এদেশের মানুষের কাছে দুধ একটি জনপ্রিয় পানীয়। মানুষের নিত্যদিনের আহার্যের তালিকায় দুধ অপরিহার্য ছিল। সে কারণে প্রাচীন কাল থেকেই এদেশের মানুষ গাভী লালন-পালন করে আসছে।
এক সময় বাংলার ঘরে ঘরে ছিল গোয়ালভরা গরু। গরু-গাভী-ছাগলের পাল নিয়ে রাখাল প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে পড়ত। মাঠে মাঠে চরাত এ সমস্ত পশু। চৈত্রের প্রখর রোদে রাখাল মাঠে গরু চরাতো। মাঠের গাছের ছায় বাঁশের বাঁশী বাজাতো। সে বাঁশীর সুরে মানুষ বিমোহিত হতো।
রাখালের বাঁশীর সুর সম্পর্কে পাওয়া যায়— পায়ে চলা মেঠো পথ গেছে বহু দূর, ‘রাখালী’ বাঁশীর সুর সরল মধুর। সন্ধ্যায় গরু নিয়ে আবার গৃহস্থের বাড়িতে ফিরে আসত রাখাল। এই ছিল তার দৈনন্দিন কাজ।
পাবনা, রাজশাহী, নোয়াখালী প্রভৃতি চরাঞ্চলে রাখালেরা গরু/মহিষের পাল নিয়ে মাসের পর মাস ‘বাথানে’ অবস্থান করে। রাখালের কাজের সাথে সাধারণত নিয়োজিত থাকে কম বয়সী কিশোর।
কখনো ভূমিহীন পরিবারের সন্তান। পার্শ্ববর্তী গৃহস্থের বাড়িতে অনেক সময়ে ভিন গ্রামের গৃহস্থের বাড়িতে থেকেও রাখালরা কাজ করে। রাখালরা মাস চুক্তি/বছর চুক্তিতে মাহিনাতে কাজ করে থাকে। কাজের বিনিময়ে এরা থাকা/খাওয়া/কাপড়-চোপড়ও পেয়ে থাকে।
গরু চরাণ ছাড়াও রাখালরা গৃহস্থের ছোটখাট কাজ করে থাকে। বাংলাসাহিত্যে রাখালের গুরুত্ব লক্ষ্য করা যায়। মধ্যযুগের গীতি কবিতায় রাধা-কৃষ্ণ-রাখাল-গোয়ালার উপস্থিতির উল্লেখ পাওয়া যায়। বাংলার লোকসাহিত্যে রাখাল রাজা, লোক সঙ্গীতে রাখালী/ মেঠো এসেছে। বাংলা সাহিত্যে রাখালের বর্ণনা এভাবে পাওয়া যায়।
রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে
শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে৷৷
সাহিত্যে আরও উল্লেখ পাওয়া যায়—
রাখাল ছেলে রাখাল ছেলে বারেক ফিরে চাও
বাঁকা গায়ের পথটি বেয়ে কোথায় তুমি যাও ৷৷
অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা চালু হওয়ায় গ্রামের ভূমিহীন কৃষকের সন্তানেরা এখন লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করছে। রাখালের পেশা বিলুপ্ত প্রায়। বর্তমানে রাখালেরা অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে।
আরও দেখুনঃ