রুজি-রুটির ড্রেসআপ | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস্ বিশ্বাস : সাধারণত স্কুলের মতো অফিসের কোনও ইউনিফর্ম নেই। তবে পোশাক নির্বাচন করার একটা নির্দিষ্ট ধরন আছে। আর তা হল, নিজের আদ্যন্ত পেশাদার অথচ লড়াকু মানসিকতাকে তুলে ধরা। তবে তা অবশ্যই শালীনতা মেনে। ভাবুন তো, আপনার পাশে বসা পুরুষ সহকর্মী যদি সাতসকালে গোবিন্দমার্কা হলুদ-কমলা জামাকাপড় পরে উপস্থিত হয় কিংবা মহিলাটি লেডি গাগার মত উদ্ভট লুক করেছে।
তবে দৃশ্য দূষণের হাত থেকে আপনার চোখ রক্ষা পাবে কী করে? বারেবারে সেদিকে তাকাতে গিয়ে আপনার মনঃসংযোগের যে বারোটা বাজবে! কর্মস্থলে কেমন পোশাক পরে যাবেন, তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন অনেকেই। বিশেষ করে যারা নতুন কাজে যোগ দেন, তাঁদের ক্ষেত্রে তো এই পোশাক নির্বাচনের বিষয়টি বেশ কঠিন। তবে, সহজ কয়েকটি পদ্ধতি মাথায় রাখলেই বিষয়টি পানির মতো সরল হয়ে যাবে। আর মনে রাখবেন, কর্মক্ষেত্রে পোশাকটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সেটাই সব কিছু নয়।
Table of Contents
রুজি-রুটির ড্রেসআপ
কাজই পরিচয়:
কর্মস্থলে পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে মাথায় রাখুন, নিজের পরিচয় আপনাকে দিতে হবে কাজের মাধ্যমে। পোশাকের মাধ্যমে নয়। খুব চাপা বা আঁটসাঁট পোশাক যেমন পরবেন না, তেমনি আবার তাঁবুর মতো ঢিলেঢালা পোশাকও এড়িয়ে চলবেন। আপনারা পরনের পোশাকটি যেন অতিরিক্ত পাতলা বা ফিনফিনে না হয়। টাইট প্যান্ট, খোলামেলা পোশাক বা খুব উজ্জ্বল রঙের জামাকাপড় কর্মক্ষেত্রে বর্জন করুন। যা হয়তো লংটার্মে আপনার জন্য অসুবিধার। ইস্ত্রি করা পরিচ্ছন্ন পোশাক পরবেন।
]]]
রং দিয় যায় চেনা:
সঠিক পোশাক মানেই কিন্তু দামি সুটটাই নয়। আবার এতটা ক্যাজুয়ালিও জামাকাপড় পরবেন না, যাতে মনে হয়, অফিসে নয় বন্ধু বা বান্ধবীর সঙ্গে টিএসসিতে ঘুরতে এসেছেন। কাজেই প্রথমেই রং নির্বাচনের দিকে নজর দিন। অফিসে খুব উজ্জ্বল বা গাঢ় রং বর্জন করাই শ্রেয়। গাঢ় লাল রঙের পোশাক আগ্রাসী মেজাজের পরিচায়ক। নীল, গোলাপি বা সবুজের হালকা শেড বিশ্বস্ততার বার্তা বহন করে। আবার ধূসর রঙ সামান্য রক্ষণশীল স্বভাবের পরিচয় দেয়। কালো পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য হলে আপনি মার্জিত, সুরুচিপূর্ণ এবং স্টাইলিশ প্রকৃতির। তবে ফ্লুরোসেন্ট রঙের ব্যবহার যতটা কম রাখা যায়, ততই ভাল।
সপ্তাহের চমক:
সাধারণত, উইকএন্ডেই ভালো পোশাক বা একটু ক্যাজুয়াল পোশাক পরে অফিসে আসার কথা সবাই বলেন। শুক্র-শনিবার উইকএন্ড হলে বৃহস্পতিবার ক্যাজুয়াল পোশাক পরতে পারেন; শনি-রবিবার হলে শুক্রবার। আর শুধু শুক্রবার উইকএন্ড এবং বৃহস্পতিবার অথবা শনিবারের মধ্যে কোন একদিন হাফ অফিস হলে সেদিন আপনি ক্যাজুয়াল পোশাক পরতে পারেন। কিন্তু অফিসের পক্ষে একেবারে বেমানান পোশাক পরবেন না।
জুতোয় নজর:
পোশাকের দিকে বেশ সতর্ক থাকলেও অনেকেই নিজের জুতো নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামান না। কিন্তু জুতোই পারসোনালিটি সম্পর্কে ভালো ধারণা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষদের জুতো যেন সব সময়ই পরিষ্কার এবং পরিপাটি করে বাঁধা থাকে। মহিলাদের ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে হাইহিল বাদ দেওয়া উচিত বলেই তাদের মতামত।
হাইহিল পরা সম্পর্কে অনেক মনোবিদই বলে থাকেন, এই ধরনের জুতোর ব্যবহার নাকি ব্যবহারকারী সম্পর্কে এমন ইমেজই তুলে ধরে যে, তিনি শুধুমাত্র শারীরিকভাবেই নন, মানসিকভাবেও নিজেকে একটু আপলিফ্টমেন্ট দিতে চান। ঘটনাটা উল্টো দিক থেকে দেখলে, অর্থটা দাঁড়ায়, যাঁদের কাজের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসে কোথাও একটু খামতি রয়েছে, তাঁরাই হয়তো কর্মক্ষেত্রে হাইহিল বা উঁচু সোলের জুতো পরার পক্ষপাতী।
অলঙ্কার নির্বাচন:
মহিলাদের ক্ষেত্রে অলঙ্কার নির্বাচনের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। এমন কোনও ভারী গয়নাগাটি পরবেন না, যা থেকে শব্দ হয়। কানে ছোট্ট স্টাড, হাতে ব্রেসলেট, ব্যস! ফ্লিপার্স, স্টেলেটো জাতীয় জুতো না পরাই বাঞ্ছনীয়। সুগন্ধির ব্যবহারও পরিমিত থাকা উচিত। চুলের ক্ষেত্রে এমন কোন স্টাইল করবেন না, যাতে আপনারই মনঃসংযোগের ব্যাঘাত ঘটে।
বড়বাবুকে দেখে শিখুন:
ক্যাজুয়াল ডে-তে খুব ক্যাজুয়াল পোশাক পরবেন কি না, ক্লায়েন্ট মিটিং -এ কী ধরনের পোশাক পরে যাবেন, এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন আপনার সিনিয়র বা বসের পোশাক নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে।
পদাধিকার মাথায় রেখে:
এমন পোশাক পরবেন না, যা আপনার সিনিয়র বা বসের পোশাকের থেকে জৌলুসে সব সময় কয়েক মাত্রা এগিয়ে থাকে। এক-দু’বার এ ধরনের পোশাক পরতেই পারেন। কিন্তু সেটাই যেন নিয়ম না হয়ে যায়।
উৎসবে ইতি টানুন:
উৎসবের রেশ যেন আপনার পোশাকে বেশি দিন ধরে না চলতে থাকে। উৎসবের আমেজের পোশাক উৎসব শেষ হয়ে যাওয়ার পরে লম্বা সময় অফিসে পরে গেলে – আপনার সম্পর্কে অতিরিক্ত আমুদে এবং কর্মবিমুখ ইমেজ তৈরি করে।
ড্রেসকোড মেনে চলুন:
এত পরে বলা হলেও, এটি বোধ হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রায় প্রতিটি কোম্পানির নিজস্ব ড্রেসকোড বা বিধি থাকে। সেই সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন চাকুরীতে ঢুকার সময়।
পোশাক হোক সময় মেনে:
আপনার পোশাকে আপনি আশির দশককে যেমন বহন করবেন না, তেমনই ২০ বছর এগিয়ে যাওয়ারও মানে হয় না। সময় মতো নিজেকে বদলান এবং তাল মিলিয়ে বদলান।
কোন পেশায় আছেন:
একেক ধরনের পেশার ক্ষেত্রে একেক রকম পোশাক গ্রহণযোগ্য হয়। মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটিটিভ হিসাবে যারা কাজ করেন, তাঁদের এক রকম পোশাক হতে পারে। আবার ব্যাংকিং সেক্টরে যারা আছেন, তাঁদের পোশাকের ধরন অন্য রকম। আপনার পেশায় আপনার আগে থেকে যারা আছেন, তাঁরা কী ধরনের পোশাক পরছেন, সেটা দেখেই সিদ্ধান্ত নিন।
শেষে বলি, টিপস দেওয়ার অর্থ এই নয়, যে এই পরিচিত নিয়মগুলিকে অন্ধের মতো অনুসরণ করলেই ‘ফ্যাশন ভিকটিম’ হওয়ার হাত থেকে পার পেয়ে যাবেন। প্রতিটি ব্যক্তির নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ থাকে। তাকেও গুরুত্ব দিন। সর্বশেষ মনে রাখবেন, প্রথমে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী। কথাটা প্রাচীন কিন্তু আজও সমান প্রাসঙ্গিক। অন্তত প্রবল প্রতিযোগিতার এই যুগে তো বটেই।
আরও পড়ুন: