শিকা শিল্পী বাংলাদেশের পেশাজীবী

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় শিকা শিল্পী বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।

শিকা শিল্পী বাংলাদেশের পেশাজীবী

শিকা গ্রামীণ বাংলার সাধারণ মানুষের নিকট অতি পরিচিত। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই বিভিন্ন কাজে হরেক রকমের শিকা ব্যবহৃত হতো। বাংলাদেশে শিকার প্রচলন প্রাচীনকাল থেকেই। বাংলার গ্রামীণ জনপদের নিকট শিকা একটি সৌখিন বস্ত্র হিসেবে পরিচিত। শিকা শিল্পের ঐতিহ্যও সুপ্রাচীন।

 

শিকা শিল্পী বাংলাদেশের পেশাজীবী

 

বাংলার গ্রামের সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন জীবনের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র সুন্দর ও পরিপাটি রাখার জন্য শিকা ব্যবহার করে থাকে। পাট, সুতা, শন প্রভৃতি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন প্রকার শিকা গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে পাওয়া যায়।

শিকা নির্মাণে বাংলার শিল্প-প্রয়াস নারী মনের মাধুর্য ও হস্ত নৈপুণ্যের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। শিকা তৈরির সময় শিকার মূল কাঠামোর সাথে জুড়ে দেয়া হয় পাটের তৈরি বিভিন্ন অলঙ্কার। এ সমস্ত উপকরণের মধ্যে থাকে সিকি, টাকা, হাতীর কান, ডালিম, মাটির তৈরি বল ও চাকা। পাটের তৈরি ‘ডালিম শিকায় ঝুলন্ত ডালিমযুক্ত শিকার উপর ছোট পাত্র ও বড় পাত্র রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।

তোয়ালে রাখার জন্য বাঁশের শলা ও পাট দিয়ে নির্মিত শিকা দেখা যায়। ঝালর শিকা পাট নির্মিত বিশেষ ধরনের শিকা। সাদা পাট দিয়ে বেণী তৈরি করে বেণী দিয়ে জাল বোনা হয়। পরে জালের খোপে একটার পর একটা রঙ্গিন ঝালর ঝুলান হয়। শিকাটি ঝুলিয়ে রাখার জন্য শিকার উপরে আংটার ব্যবস্থা রাখা হয়।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

কোরআন শরীফ, ইসলামী বইপত্র, টুপি, রোহেল প্রভৃতি রাখার জন্য বাঁশ, পাট, রঙিন সুতা ও কাপড়ে অলঙ্কৃত ফুলটুঙ্গী শিকা গ্রামের অনেক ঘরেই দেখা যায়। গ্রাম বাংলায় মহিলারা একই শিকায় অনেক পাত্র রাখার জন্য তৈরি করে লহর বিশিষ্ট বৃহদাকার শিকা। এ শিকায় উপর থেকে নীচে পর্যন্ত ছোট বড় বেশ কিছু পাত্র রাখা যায়। এছাড়াও নিচে বড় পাত্রের চারপাশে অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট আকৃতির পাত্র রাখার ব্যবস্থা থাকে।

এ শিকার মাঝে বলুনের আকৃতিতে নকসা এবং নিচে রসুনের আকৃতিতে ঝালর তৈরি করা হয়। বিভিন্ন আকারের হাড়ি, পাতিল, বোতল প্রভৃতি রাখার জন্য পাট দিয়ে তৈরি পরস্পর সংলগ্ন হাত ধরাধরি শিকা অনেক বাড়ীতে দেখা যায়। হাত ধরাধরি শিকাকে পাবনার বেড়া অঞ্চলে হাত (সাত) বোতলের শিকা হিসাবে পরিচিত। সাত সৌভাগ্যের সূচক। সাধারণ তিন ধরনের বুনন পদ্ধতিতে হাত ধরাধরি শিকা তৈরি করা হয়।

প্রথমতঃ পাট পাক দিয়ে, দ্বিতীয়তঃ আলগা পাট সুতা দিয়ে বেধে এবং তৃতীয়তঃ চুলের বেণীর মত পাটের বেণী করে। ব্যবহার্য বিভিন্ন ধরনের দ্রব্যাদি রাখার জন্য পাত্রের মান অনুযায়ী বিভিন্ন নামের শিকা যেমন—তলদেশ গিরা দেয়া শিকা, কাপড়ে রাখার শিকা, জালি বোনা ফুলটুঙ্গী, কাঁথা-বালিশ রাখার জন্য গাইনজা, আয়না-চিরুনী ঝুলানোর শিকা, হাত বোতল শিকা, হাজারী শিকা, ফিতার মতো ঝুলান শিকা, লহরী শিকা ইত্যাদি।

 

শিকা শিল্পী বাংলাদেশের পেশাজীবী

 

শিকা তৈরি করতে সাধারণত: পাটের আঁশ, সুতা, কাপড়, পুঁতি, কড়ি, মাথার চুল, টাকা, সিকি, হাতীর কান, ডালিম রং প্রভৃতি দ্রব্যাদি ব্যবহার করা হয়। গ্রাম বাংলার অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত মহিলারা শিকা তৈরির পেশায় নিয়োজিত। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলার গ্রামের ঘরে ঘরে এ শিল্পের কদর ছিল।

বর্তমানে কারুশিল্পের কদর গ্রাম ছাড়িয়ে শহর গঞ্জে বিস্তার লাভ করেছে। শহরের অনেক বাসা বাড়িতে এখন শিকা সৌখিন ও ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শিকা শিল্পের ব্যপ্তি বর্তমান দেশ ছেড়ে বিদেশে প্রসারিত হচ্ছে। শিকা ও পাটের তৈরি দ্রব্য সামগ্রী এখন বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। বলতে গেলে শিকা তৈরি পেশায় নিয়োজিত মহিলাদের এখন সুদিন যাচ্ছে।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment