হাজাম বাংলাদেশের পেশাজীবী

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হাজাম বাংলাদেশের পেশাজীবী।যা বাংলাদেশের পেশাজীবী বই এর অন্তর্ভুক্ত।

হাজাম বাংলাদেশের পেশাজীবী

প্রাচীন বাংলায় মুসলমান ছেলেদের খাৎনা করানোর কাজটি ‘হাজাম’ দিয়ে করানো হতো। খাৎনা করানো ইহুদীদের প্রাচীন ধর্মীয় ও জাতীয় প্রথা। ইসলাম ধর্ম আবির্ভাবের পর মুসলমানেরা প্রথম খাৎনা পদ্ধতি গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে পৃথিবীর সকল মুসলমানের মধ্যে তা প্রচলিত হয়।

 

হাজাম বাংলাদেশের পেশাজীবী

 

খাৎনা একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। সম্ভবত সোনার গাঁর শাসন কর্তা ফকরউদ্দিন মুবারক শাহের আমলে গৌড়ের মুসলমান বসতি স্থাপনকারীদের মধ্য থেকে হাজামদের এ দেশে আগমন ঘটে। ‘হাজাম’দের পেশা ছিল মুসলমান ছেলেদের খানা বা মুসলমানী করানো।

চট্টগ্রাম এলাকায় হাজামদের ওস্তাদ হিসেবে সম্মান করে এবং সে এলাকায় তাদেরকে ‘খলিফা’ সম্বোধন করে। অনুমান করা যায় ১৩৪০ খ্রীষ্টাব্দে সোনারগাঁর শাসনকর্তা ফকরউদ্দীন মুবারকশাহ’র চট্টগ্রাম বিজয়ের পর, চট্টগ্রামে গৌড়ের মুসলমান বসতি স্থাপনকারীরা সেখান থেকে হাজামদের এদেশে এনেছিলেন। মুকুন্দরাম লিখেছেন— হাজামরা এত ব্যস্ত থাকত যে তারা বিশ্রামের সময় পর্যন্ত পেত না।

মুসলমান সমাজে হাজামদের আতরাফ গোত্রভুক্ত করা হয়। হাজামদের গ্রাম ওয়ারী খাৎনা করানোর এলাকা ভাগ থাকে। এক হাজামের নির্দিষ্ট এলাকায় অন্য হাজামের খাৎনা করানো নিষিদ্ধ ছিল। হাজামকে খাৎনা করানোর জন্য কালেক্টরি থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হতো। হাজামের খানা এলাকা খানা মহাল নামে পরিচিত।

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এক হাজাম মারা গেলে তার স্থলে অন্য হাজামের নাম কালেক্টরীতে জারী করাতে হতো। হাজাম গোত্রের সাথে সাধারণত অন্য গোত্রের মুসলমানরা বিবাহ বা আত্মীয়তার সম্বন্ধ করে না। সাধারণত তাদের বৈবাহিক সম্বন্ধ নিজেদের গোত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

হাজামরা সাধারণ মুসলমান সমাজের দৃষ্টিতে অবহেলিত। এজন্য এরা আশরাফ মুসলমান সমাজে এক বৈঠকে উঠাবসা ও আহারাদি করতে সংকোচ বোধ করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খাৎনার সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও জাকজমকের সাথে উৎসব করা হয়ে থাকে। হাজামগণ খাৎনা করানোর জন্য খুর, ব্লেন্ড, বাঁশের চোচ, নতুন মাটির হাড়ি, পুরাতন কাপড় পোড়ান সলতে ইত্যাদি ব্যবহার করে।

 

হাজাম বাংলাদেশের পেশাজীবী

 

খাৎনা করানোর পর হাজামরা নতুন পোষাক ও পুরস্কার পেত। হাজামরা খুব সাবধানী মানুষ। এরা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে ডাক্তারের মাধ্যমে খাৎনা করান হয়। ফলে সনাতন পদ্ধতিতে খাৎনা করানোর প্রথা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। এ পেশার উপর নির্ভর করে জীবন ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য হাজাম গোত্রের অনেকে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment