ইন্টার্ভিউয়ে ভয়কে জয় | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস্ বিশ্বাস

ইন্টার্ভিউয়ে ভয়কে জয় | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস্ বিশ্বাস : রিটেনে ‘ছক্কা’ মারতে পারলেও ইন্টার্ভিউতে ‘গোল্ডেন ডাক’ মারার সংখ্যা কম নয়। কিন্তু ইন্টার্ভিউটাই সহজ হওয়ার কথা। এর জন্য যা প্রয়োজন তা হল: ইতিবাচক আচরণ, কাজের প্রতি উৎসাহ আর বাকি প্রার্থীদের ছাপিয়ে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করা। আপ-মিড-লো কিংবা এন্ট্রি লেভেল, ইন্টার্ভিউ -এর গুরুত্ব একই থাকে। তাই তার জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নিতেই হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ইন্টার্ভিউ দেওয়া।

ইন্টার্ভিউয়ে ভয়কে জয় | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস বিশ্বাস

অনেকে ইন্টার্ভিউয়ের নামেই ভয় পান। ভয় কাটানোর জন্য রইলো কিছু টিপস:

ইন্টার্ভিউয়ে ভয়কে জয়

ইন্টার্ভিউতে বসার আগে

প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানুন

যে সংস্থায় ইন্টার্ভিউ দিতে যাচ্ছেন সেই সংস্থার গোড়াপত্তন থেকে লাভ-ক্ষতি, সবকিছু সম্পর্কে বিস্তারিত ও স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। বর্তমানে নিয়োগদাতা সম্পর্কে কিছু না জানাটা গর্হিত অপরাধ। সাধারণ ইন্টার্ভিউয়ে প্রথমেই প্রশ্ন করা হয়, প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে কী জানেন, আর কেন এখানে কাজ করতে চান। তাই আগে থেকেই কোম্পানি সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে রাখুন। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে অন্যান্য ওয়েবসাইট যেমন- লিঙ্কডইন, গ্লাসডোর, গুগল নিউজ, জুমইনফো ডট কম, হুভারস থেকে ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান এবং সহকর্মীদের সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে পারবেন।

Corporate Buildings 1 ইন্টার্ভিউয়ে ভয়কে জয় | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস্ বিশ্বাস

এছাড়া সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট যেমন ফেসবুক, টুইটার, পিন্টারেস্ট এবং ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকেও সংস্থার দৈনন্দিন অ্যাক্টিভিটি এবং ওয়ার্ক কালচার সম্পর্কে জানা যাবে। এ সব দেখে প্রতিষ্ঠান সম্পর্ক আগাম একটা ধারণা নিতে পারেন। গত পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানটির কাজ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, আর্থিক অবস্থা, মার্কেট পজিশন- এই বিষয়গুলো ভালো করে জেনে নিন। এতে আলোচনা চালাতে সুবিধে হবে। ইন্টারভিউয়ার আপনার হোম ওয়ার্ক দেখে অবশ্যই খুশি হবেন।

পেষাক নির্ধারণ করুন

বেমানান পোশাক ইন্টার্ভিউয়ের জন্য কখনও ঠিক নয়। ন্যুনতম ড্রেসকোড মেনে চলার দরকার। নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ নিয়ে ভাবলে কিন্তু চলবে না। ড্রেসকোড মেনে পোশাক পরুন। ইন্টার্ভিউ দিতে গেলে পোশাক হওয়া চাই ছিমছাম ও ভদ্র। পুরুষদের ক্ষেত্রে ট্রাউজার ও শার্ট (প্রয়োজনে টাই ও স্যুট) এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে শাড়ি, সালোয়ার কামিজ অথবা ট্রাউজার ও শার্ট চলতে পারে। কখনও বেশি জমকালো পোশাক পরা উচিত নয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে উগ্র মেক-আপ একদমই চলবে না। চলবে না প্রচুর ভারি গয়নার ব্যবহারও। পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে শরীরে ট্যাটু আঁকা থাকলে অথবা চুলে উগ্র রঙ করা থাকলে তা ইন্টারভিউয়ারদের ভাল না-ও লাগতে পারে। তাই ইন্টার্ভিউয়ের সময় এসব থেকে দূরে থাকাই ভাল।

Alarm Clock ইন্টার্ভিউয়ে ভয়কে জয় | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস্ বিশ্বাস

সময়মত পৌছাতে হবে

ইন্টার্ভিউয়ের অন্তত ১৫-৩০ মিনিট আগে পৌঁছতে হবে। দরকার হলে আগের দিন ইন্টার্ভিউয়ের স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ করে নিন। যাতে কোন ধরণের বিড়ম্বনা ছাড়াই ঠিক সময় পৌঁছানো যায়।ঠিকানা অপরিচিত হলে গুগল ম্যাপের সাহায্য নিন।

রেজিউমের কপি সাথে রাখুন

মনে করে অবশ্যই আপনার রেজিউমের আরেকটি কপি নিয়ে যাবেন। ইন্টারভিউয়ারের কাছে থাকলেও আপনি আপনার রেজিউমেটি তাঁকে অফার করতে পারেন। যদি তিনি চান তবে আপনার বিভিন্ন যোগ্যতার সনদ ও রেফারেন্স লেটার থাকলে চট করে সেগুলি দেখিয়ে নিতে পারেন।

Office Woman 1 ইন্টার্ভিউয়ে ভয়কে জয় | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস্ বিশ্বাস

ইন্টার্ভিউয়ের সময় কী করা উচিত

ইন্টার্ভিউ বোর্ডে প্রবেশ করার আগে অবশ্যই দরজা সামান্য ফাঁক করে ইন্টারভিউয়ারদের সম্মতি নেওয়া বিশেষ বাঞ্ছনীয়। ‘পজিটিভ’ মনোভাব রাখুন।

  • ইন্টার্ভিউ চলাকালীন সময়ে সোজা হয়ে বসুন, তবে মনে রাখবেন আপনাকে যেন রোবট মনে না-হয়। এই সময় আপনার শরীরী ভাষা অনেক সংযত হওয়া উচিত। রিল্যাক্সড থাকুন, কিন্তু কথাবার্তা, বসা, চাহনিতে যেন গা-এলানো ভাব না-থাকে। ইন্টারভিউয়ারদের সঙ্গে ‘আই কন্টাক্ট’ রাখা খুব জরুরি। মুখে সামান্য হাসি রাখবেন কথা বলার সময়। আপনার এমন আচরণ অনেকটাই সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।
  • আপনাকে চাকরি দিলে আপনি বদলে কীরকম কাজ করবেন, এই প্রশ্নটা থাকবেই। এক্ষেত্রে ইন্টারভিউয়ারের সঙ্গে আপনার দায়িত্ব সম্ভন্ধে খোলাখুলি আলোচনা করে নিন। আপনার কোন বিশেষত্ব প্রতিষ্ঠানের কাজে লাগতে পারে এতে আপনার কনফিডেন্স নজরে পড়বে।
  • ভাল করে শুনুন, কী বলা হচ্ছে। মনে রাখবেন, ভাল শ্রোতা হওয়া খুব দরকারি। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ইন্টার্ভিউ-এ অনেক সময়েই কথার ফাঁকে নানা কথা গুঁজে দেওয়া হয়। সেগুলি কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
  • উত্তর দেওয়ার আগে ভাল করে ভেবে নিন। প্রয়োজনে সামান্য সময় নিন। এতে আপনার সম্পর্কে ভাল ধারণাও তৈরি হবে। উত্তর অজানা থাকলে বলে দিন সেটাও। আর জানা উত্তর হলে গুছিয়ে জবাব দিন।
  • পাল্টা প্রশ্নের সময় যেন ঔদ্ধত্য প্রকাশ না-পায়। যা জানার, তা স্মার্টলি জেনে নিন। বিনয়ী হওয়ার অর্থ কিন্তু আনস্মার্ট হওয়া নয়।
  • প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন। অনেক সময় ইন্টারভিউয়ার তার নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে থেকে মতামত চাইতে পারেন।
  • একেবারে শেষে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হ্যান্ডশেক করে ইন্টারভিউয়ারকে তার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাতে ভুলবেন না।

 

Office Workers 1 ইন্টার্ভিউয়ে ভয়কে জয় | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস্ বিশ্বাস

 

কী করা উচিৎ নয়

  • ইন্টার্ভিউয়ের সময় অতিরিক্ত টেনশন করা উচিত নয়। ধৈর্য হারাবেন না। ইন্টারভিউয়ারের কোন কথায় হতাশ হয়ে পড়া বা রাগা চলবে না।
  • ইন্টার্ভিউ বোর্ডে চেয়ারে হেলান দিয়ে অথবা টেবিলের উপর হাত রেখে বসা উচিত নয়। এ সময় ‘চুইংগাম’ চিবানো ঠিক নয়।
  • কথা না-বলেই অনেক কিছু যখন বোঝানো যায়, তখন কথা বলবেন কেন? অনেক ক্ষেত্রে উত্তর জানা না থাকলে উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে উপস্থিত বুদ্ধি থাকা বিশেষ প্রয়োজন।
  • সবসময় স্মার্টলি ইন্টার্ভিউ দেওয়ার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলে ওভার স্মার্টনেস দেখিয়ে নেগেটিভ ইম্প্রেশন তৈরি করবেন না। কম কথায় কাজ সারুন। মিথ্যে বা অতিরঞ্জিত কথা মুখে আনবে না। কোনও প্রশ্ন বুঝতে অসুবিধা হলে হলে নির্ভয়ে আবার জিজ্ঞাসা করুন। না বুঝে কোনও উত্তর দেওয়া ঠিক নয়।
  • নিজের সীমাবদ্ধতা প্রকট হয়, এমন কোনও উত্তর দেবেন না। কোনও বিষয় অজানা থাকলে অকপটে তা স্বীকার করুন। সবজান্তা ভাব দেখিয়ে বিষয়টি না জেনেই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন, ইন্টার্ভিউ নেওয়া হচ্ছে আপনাকে চাকরি দেওয়ার প্রাথমিক ইচ্ছে থেকেই। ফলে, জেতা খেলা নিজের দোষে হেরে আসবেন না।
  • ইন্টার্ভিউ বোর্ডে ইন্টারভিউয়াররা আপনাকে খাওয়ার জন্য অনুরোধ করলে ‘না’ বলবেন না। সামান্য কিছু হলেও খাবেন।
  • মনে রাখবেন, পেশাদার জায়গায় গিয়েছেন। ফলে, ব্যক্তিগত কথাবার্তা যত দূর সম্ভব বাদ দিন। যাঁরা ইন্টার্ভিউ নিচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ আপনার পূর্ব-পরিচিত হতেই পারেন। কিন্তু সেটা যেন প্রকাশ না-পায়।
  • চাকরির জন্য আপনি মরিয়া, এটা কখনওই বোঝাবেন না। আপনার চাকরি প্রয়োজন, সেটা সকলেরই প্রয়োজন। ফলে, আপনি কোনও ক্ষেত্রবিশেষ নন। ডেসপারেশন মোটেই ভাল জিনিস নয়।

Girl in Office 3 ইন্টার্ভিউয়ে ভয়কে জয় | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস্ বিশ্বাস

সহজ করুন ইন্টার্ভিউ

ইন্টার্ভিউয়ের শুরুতেই হোঁচট খেয়েছেন। কিন্তু তা বলে তো হাল ছেড়ে দেওয়া যায় না! বরং তাড়াতাড়ি ভুল শুধরে নতুন উদ্যমে মুখোমুখি হোন প্রশ্নকর্তার। কঠিন কাজ হল ইন্টার্ভিউ-এর খাত নিজের দিকে ঘোরানো। মনে রাখবেন, ইন্টার্ভিউ হল এক ধরনের কথোপকথন। একটির সঙ্গে আর একটির সাধারণত যোগসূত্র থাকে। এমনভাবে উত্তর দিন যাতে পরের প্রশ্নগুলি আপনার আয়ত্তের মধ্যেই থাকে।

  • ইন্টার্ভিউয়ের বাঁক যদি বিপর্যয়ের দিকে এগোতে থাকে প্রশ্নকর্তার অঙ্গ-ভঙ্গিতেই ইঙ্গিত পাবেন। যেমন তাঁর অভিব্যক্তির মধ্যে কিছু তারতম্য লক্ষ্য করবেন। আপনাকে নিয়ে কেমন এক উদাসীন ভাব দেখতে পাবেন। প্রশ্নকর্তা পা নাড়াচ্ছেন, মাঝে মধ্যেই ঘড়ি দেখছেন। আপনার উত্তর দেওয়া হয়ে গেলে পরের প্রশ্নটি করতে দেরি করছেন। সাধারণত পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে প্রশ্ন কর্তা মাথা নেড়ে, মৃদু হেসে জানিয়ে দেন তাঁর মনোভাব।
  • কোন প্রশ্নের উত্তরে ফাউল করেছেন। দ্রুত শিগগির ভুল শুধরে নিন। প্রায় উৎকণ্ঠা থেকে আমরা বিচলিত হয়ে পড়ি। তবে পরের দিকে নিজেকে সামলে নিয়ে ভালো ফল করে থাকি। এইভাবে ভাবার চেষ্টা করুন। সেই রেশ আর টেনে নিয়ে যাবেন না। নিজের ভাবনা চিন্তা গুছিয়ে নিন। পরের প্রশ্ন থেকেই গোল দেওয়ার চেষ্টা করুন – প্রশ্ন করার পর কিছুটা সময় নিয়ে উত্তর দিন। ত্রুটিগুলো যাতে পুনরায় প্রকাশ না পায় সেই চেষ্টাই করুন। পরের দিকে ভালো করে প্রশ্নের সম্মুখীন হলে প্রথমের ভুল ইন্টারভিউয়ার ভুলে যেতে পারেন।
  • ইন্টার্ভিউ বোর্ডে হঁঠাত খেয়াল করলেন প্রশ্নকর্তারা আপনার প্রতি বিরূপ। চটজলদি মূল্যায়ন করুন এমন কী উত্তর দিয়েছেন? যথাযথ উত্তর না দিয়ে অসংলগ্ন কথা বলেছেন? কোন প্রশ্নের উত্তর গুবলেট করে ফেলেছেন? গলার স্বরে কর্কশতা প্রকাশ পেয়েছ! এমন কিছু হয়ে থাকলে সময় নষ্ট না করে ভুল নির্ণয় করুন। পরের প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার আগে ঠিক ইন্টার্ভিউ দেওয়ার টিপসগুলো একবার মনে করে নিন। সোজা হয়ে বসে প্রশ্নকর্তার চোখের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট কথায় উত্তর দিন। আত্মবিশ্বাস হারাবে না।
  • প্রশ্নকর্তা চুপ করে গেলে নিজে থেকে কথা বলুন। এই কোম্পানিতে কাজ করার পদ্ধতি কী সেটা জানার চেষ্টা করুন। কাজের রীতিনীতি নিয়ে আপনার কী ধারণা তাও বলতে পারেন। পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন। কোনও প্রোজেক্টে সাফল্য, কি কি চ্যালেঞ্জ পর করেছেন- এ জন্য কোন কোন দক্ষতা কাজে লাগিয়েছেন ইত্যাদি। এর থেকে পরবর্তী প্রশ্ন আসতে পারে।
  • আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ইন্টার্ভিউয়ে ভালো করেছেন। কিন্তু হাজার চেষ্টাতেও বরফ গলছে না। গম্ভীর বাতাবরণ । প্রশ্নকর্তাদের হাবভাবেই বুঝতে পারছেন তাদের তুষ্ট করতে পারেননি – এমন ভেবে হাল ছেড়ে দিলে ভুল করবেন। নিজের পেশাদারিত্ব এবং দক্ষতার উপর আস্থা রেখে স্বাভাবিক থাকুন। ধরে নিন – এটি তাঁদের সুপরিকল্পিত পন্থা – প্রার্থী নির্বাচনে কড়া হতে এই কৌশলটি তাঁরা অবলম্বন করেছেন।। জটিল পরিস্থিতিতে আপনি কতটা সাবলীল সেটা বিবেচনা করতেই এই গুরুগম্ভীর আবহাওয়া।
  • ইন্টার্ভিউ পরীক্ষার মতন। তাই সিস্টেম মেনে ফলো আপ করুন। খারাপ ইন্টার্ভিউ দিয়েছেন মনে করে চুপচাপ বসে থাকবেন না। আপনার ধারণার উল্টোটাও হতে পারে। ফল জানতে খবর নিন।
  • ইন্টার্ভিউ চলাকালীন যদি এমন মনে হয় যে, আপনি এরই মধ্যেই রিজেক্ট হয়ে গিয়েছেন, তারপরেও কোনোভাবে আপনার উৎসাহের ঘাটতি যেন ধরা না পড়ে। অনেক সময় ইন্টারভিউয়ার প্রার্থীকে ‘বাজিয়ে’ দেখার জন্য নিরুৎসাহ করার চেষ্টা করে। তাই ইন্টার্ভিউ বোর্ডে ঢুকার পর থেকে বের হওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়া যাবে না। আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে হবে।

 

Corporate Office 3 ইন্টার্ভিউয়ে ভয়কে জয় | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস্ বিশ্বাস

 

আপনার প্রশ্ন করার পালা

ইন্টার্ভিউ মানে তো চাকুরীপ্রার্থীর পরীক্ষা! প্রতিটি উত্তরেই হবু নিয়োগকর্তাকে সন্তুষ্ট করার চ্যালেঞ্জ। এই পরিস্থিতিতে প্রার্থী যদি নিজেই প্রশ্ন করে বসে তা হলে তো চাকরি হবেই না। কিন্তু এমনও পরিস্থিতিও আছে, যেখানে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়েই পজিটিভ ইম্প্রেশন পাওয়া যায়। ইন্টার্ভিউতে অনেক সময় নিয়োগকর্তা চাকুরীপ্রার্থীর মনোতাত্বিক পরীক্ষার জন্য অস্বস্তিকর প্রশ্ন করে থাকে। তারা দেখতে চায়, আপনি কতটা সপ্রতিভ। এ ক্ষেত্রে একেবারে বিনয়ে বিগলিত হয়ে উত্তর দেওয়া, অথবা হুট করে রেগে বোর্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়া, কোনটাই উচিত হবে না। বরং, একটু সময় নিয়ে। কৌশলগত উত্তর দিলে – আপনার ধৌর্য এবং প্রজ্ঞা প্রকাশ পাবে।

কোন সে প্রশ্ন?

ইন্টার্ভিউতে প্রশ্নগুলো যদি হয় আপনার পড়াশোনা-কাজ-ক্যারিয়ার সম্পর্কে – তাহলে আপনার কোনও চিন্তা নেই। হোম ওয়ার্ক তো আপনার সাজানোই আছে। কিন্তু প্রশ্নগুলো যদি একটু বেয়াড়া হয়। তাহলে? ধরুন, প্রশ্ন এলো, ‘আপনার ক’টা প্রেমিক/প্রেমিকা আছে?’ অথবা ‘বিয়ে -টিয়ে করার কথা কবে ভাববেন?’ বা আরও অস্বস্তিকর প্রশ্ন ‘বর্তমান সরকারের যাবতীয় পদক্ষেপকে কি সমর্থন করেন, নাকি করেন না?’ – এই ধরণের প্রশ্নের একটারও উত্তর দিতে আপনি বাধ্য নন। আপনি মুখের ওপর বলেই দিতে পারেন, এগুলোর উত্তর আপনি দেবেন না। এতে আপনার চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রকাশ পাবে ঠিকই। কিন্তু চাকরির সম্ভাবনাটি হারিয়ে ফেলবেন।

প্রশ্নের বদলে প্রশ্ন:

এ ক্ষেত্রে সমাধান হল যেমন প্রশ্ন, তেমন তার উত্তর। সাধারণত, ইন্টারভিউয়ারকে চাকুরীপ্রার্থী উল্টো প্রশ্ন করে না। কিন্তু, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সামনে এগোনোই বুদ্ধিমানের কাজ। অর্থাৎ যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনার ক’টা প্রেমিক/প্রেমিকা আছে?’, আপনি দু’ভাবে উত্তর দিতে পারেন। ঠিক উত্তর নয়। এখানে আপনি বুদ্ধি খাটিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করবেন। অর্থাৎ, আপনি সরাসরি উত্তর না দিয়ে – প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন সাজিয়ে পাশ কাটিয়ে যান। অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হলে পাল্টা প্রশ্ন করুন, ‘স্যরি, ইন্টার্ভিউয়ে আমি কখনও এমন ধরনের কোনও প্রশ্নের মুখোমুখি হইনি। কেন এমন প্রশ্ন করছেন, দয়া করে একটু বলবেন কি?’

এবার নিয়োগকর্তাকে নিজের মত ছেড়ে দিন। সে তাঁর প্রশ্ন জাস্টিফাই করুক। অথবা, আপনি এটাও বলতে পারেন, ‘খুবই ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন করেছেন আপনি। উত্তর দেওয়াটাও আমার কাছে অনেক চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে। কিন্তু, আমি যে কাজ করবো, তার সঙ্গে এই প্রশ্নটার কি সম্পর্ক একটু বলবেন কি’ এবার আপনার নিয়োগকর্তা যেমনটি বলবেন, সেই অনুযায়ী আপনি আপনার স্ট্র্যাটেজি সাজান। কখনওই মেজাজ হারাবেন না। বরং, কথার প্যাচে বুঝিয়ে দিন, কেন এমন অস্বস্তিকর বিব্রতকর প্রশ্ন সেটা যদি ইন্টারভিউয়ার পরিষ্কার করে বলতে পারেন, তাহলে আপনিও উত্তর দিতে রাজি আছেন।

Curvy Secretary in the Office ইন্টার্ভিউয়ে ভয়কে জয় | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস্ বিশ্বাস

‘কেন এখানে চাকরি করতে চান?’

ইন্টার্ভিউ দেওয়ার সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুখোমুখি হতে হয় এই প্রশ্নের। কিন্তু এ ধরণের প্রশ্নের যুক্তিযুক্ত জবাব দেওয়াটা মোটেও সহজ নয়। মনে-মনে হয়তো ভাববেন এটা কোন প্রশ্ন হল! হাসতে হাসতে জবাব দিতে চাইবেন। কিন্তু মুখ খুলতে গিয়েই দেখবেন সমস্যায় পড়ছেন। কেননা, এ-ক্ষেত্রে সোজাসাপটা উত্তরে ঝঞ্ঝাট রয়েছে।

আপনি খোঁজ খবর নিয়ে জেনে ফেলেছেন এই সংস্থার নাড়িনক্ষত্র – স্যালারি প্যাকেজ খুবই ভালো মানে – খুবই ভালো, ছুটিছাটার ফ্লেস্কিবিলিটি আছে। রয়েছে প্রজেক্ট বোনাস। এমন কি বছরে বিদেশ ভ্রমণেরও সুযোগ রয়েছে! কিন্তু আপনার এই হোমওয়ার্ক এই প্রশ্নের উত্তর দিতে খুব একটা কাজে লাগবে না। কেননা, আপনি যদি সোজা সাপটা আপনার মনের কথা বলে বসেন, তাহলে হয়তো প্রশ্নকর্তারা ভেবে বসতে পারে যে, কাজটা আপনার কাছে প্রায়োরিটি নয় – আপনি আর্থিক লোভেই চাকরি করতে এসেছেন। অন্য কোথাও বেশি অফার করলে চেলে যাবেন।

ফলে, আপনাকে যেটা করতে হবে সেটা হল – উত্তরটা সোজাসুজি না দিয়ে একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে দিন। অর্থাৎ মনের ভিতর উত্তরটা যাই হোক না কেন, আপনাকে বলতে হবে অন্য কোনও কিছু। যাতে সাপও মরে, আবার লাঠিও না ভাঙে। এবার দেখা নেয়া যাকে উত্তরে কী -কী বললে একূল -ওকূল দু’টোই রাখা যেতে পারে।

  • যে সংস্থায় চাকরি নিতে চাইছেন, তার লোগোর দিকে চোখ বুলিয়ে নিন। সেখানে দেখবেন ইউএসপি (ইউনিক সেলিং প্রপোজিশন) তে লেখা রয়েছে ‘ভোক্তার সন্তুষ্টিই আমাদের লক্ষ্য’। আপনি সেটার উল্লেখ করতে পারেন। সেই সঙ্গে যোগ করে দিন, এমন একটা সংস্থায় কাজ করতে পারলে কনজিউমারদের আরো ভালো সার্ভিস দেয়া যাবে। তাই আপনি এখানে কাজ করতে চান।
  • সংস্থান ওয়েবসাইট এবং সোশাল একাউন্টগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিন। সেখানে সেই সংস্থার সম্পর্কে প্রচুর তথ্য পাবেন। সেগুলো মনে-মনে সাজিয়ে রাখুন। ইতিবাচক দিকগুলো অনায়াসে উগরে দিতে পারেন।
  • রিসেশন বা অন্য বিরূপ পরিস্থিতিতে সংস্থাটি যদি প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে ভালো সাফল্য পায়, অবশ্যই তার উল্লেখ করুন। এও বলতে পারেন, এমন একটি সংস্থা কর্পোরেট দুনিয়ায় নজির সৃষ্টি করেছে। তাই আপনি সেই সংস্থার কর্মী হিসাবে অংশ হতে চান।
  • প্রথমেই আলোচনা হয়েছে বেতন বা হলিডে প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো। এই উত্তরের সাথে যে সব বিষয় এড়িয়ে যাবেন। তা হল: সেই সঙ্গে কোনও আইনি ব্যাপার এড়িয়ে চলুন। হয়তো কোনও মামলায় ওই সংস্থায় জিতে গিয়েছে। এ-ব্যাপারটা উল্লেখ করবেন না। এড়িয়ে চলুন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতাসহ শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির সুনামও। হয়তো আপনার ইন্টারভিউয়ার ওই ব্যক্তিকে মনে-মনে ভয়ঙ্কর পছন্দ করেন না কিংবা, নিজেদের ভেতরে গ্রুপিং-পলিটিক্স আছে। তাই রিক্স নেয়ার দরকার নেই।

 

Office Desk 4 ইন্টার্ভিউয়ে ভয়কে জয় | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস্ বিশ্বাস

 

ইন্টার্ভিউতে যে সব কথায় চাকরি খোয়াবেন

সাধারণত, ইন্টার্ভিউয়ে এমন কিছু কথা রয়েছে, যেটা বললে যিনি ইন্টার্ভিউ নিচ্ছেন তাঁদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফলে অনেক সময় হওয়া চাকরি হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। দেখে নিন ইন্টার্ভিউ-র সময় কোনও কোনও কথা উচ্চারণ করা ভয়ঙ্কর:
আচ্ছা, বেতনটা কত হচ্ছে: ইন্টার্ভিউতে কখনও স্যালারি প্যাকেজ নিয়ে আগবাড়ায়ে কথা তুলবেন না।

যিনি ইন্টার্ভিউ নিচ্ছেন, তাঁকে প্রথমে কথাটি বলতে দিন। জিজ্ঞাসা করলে তার পর আপনি বলতে পারেন। কিন্তু তার আগে নয়। নিজে থেকে স্যালারি প্যাকেজ নিয়ে কথা বলতে চাওয়ার অর্থ – আপনার কাজের ব্যাপারে কোনও আগ্রহ নেই, শুধু স্যালারি নিয়েই ভাবছেন। যদি অন্য কোথাও বেশি স্যালারি অফার পেলে চলে যেতে পারেন। প্রায় প্রত্যেকটা কোম্পানির লক্ষ্য থাকে যাঁকে চাকরি দেওয়া হচ্ছে তিনি যেন দীর্ঘ দিন কাজ করেন।

প্লিজ, ব্যক্তিগত প্রশ্ন নয় !!!:

সাধারণত, যিনি আপনার ইন্টার্ভিউ নিচ্ছেন তাঁকে আপনি চেনেন না। চাকরি দেওয়ার আগে স্বাভাবিক ভাবেই আপনার সম্পর্কে নানা তথ্য জানতেই তিনি আপনাকে প্রশ্ন করবেন। কিছু কিছু প্রশ্ন হয়তো খানিকটা ব্যক্তিগত হতে পারে। তাই বলে আপনি সরাসরি ইন্টারভাউয়ারকে এটা কখনই বলতে পারেন না যে আপনি কোনও ব্যক্তিগত প্রশ্নের উত্তর দেবেন না। এটা বলার অর্থ, প্রথমেই আপনার বলা কথার ওপর অবিশ্বাস তৈরি করা। এটাও হতে পারে, স্রেফ সন্দেহের বশেই আপনার চাকরিটা হবে না। এ ব্যাপারটা মাথায় রাখুন।

স্যরি, ফোনকলটা রিসিভ করি:

ইন্টার্ভিউয়ের মোবাইল ফোনটা বন্ধ রাখুন। যদি দুর্ভাগ্য কিংবা জরুরী প্রয়োজনে ফোন অন থাকে যত দরকারি ফোনকল হোক রিসিভ করবেন না। যদি তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকে, তবে আগে থেকে ফোন করে ইন্টারভিউয়ারকে জানান যে জরুরী প্রয়োজন থাকায় আজ আপনার আসতে অসুবিধা হবে। কিন্তু ইন্টার্ভিউ দিতে আসার পর সেখানে এমন ভুল করবেন না। আপনি তাঁকে ‘সরি’ বলে কল রিসিভ করতে পারেন ঠিকই, কিন্তু এটা আপনার ওপর খারাপ ধারণার জন্ম দেবে। এটা করা মানে তাঁকে সরাসরি অপমান করা। ব্যাপারটা বুঝুন, ইন্টারভিউয়ার তাঁর সময় থেকে সময় বার করে আপনাকে দিয়েছেন।

দ্রুত শেষ করুন, আমার আরেকটা ইন্টার্ভিউ আছে:

আপনিই বলুন এমন কথা আপনাকে বললে আপনি কি চাকরি দিবেন? এই ধরণের কথা বলার অর্থ হল, আপনি এটা বুঝিয়ে দিলেন যে, আপনার ওই কোম্পানিতে চাকরি করার তেমন একটা আগ্রহ নেই। জাস্ট টাইম পাস করতে এসেছেন। আপনার চাকরির যতই দরকার থাক, কোনও ইন্টার্ভিউতে ঢুকে এটা বললে সেই মুহূর্তেই আপনার যাবতীয় সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। ইন্টার্ভিউতে নিজের শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করুন।

চাকরিটা কি আমার হচ্ছে:

সুন্দর একটা ইন্টার্ভিউ শেষ হওয়ার পরই যদি আপনি ওভার কনফিডেন্স হয়ে ইন্টারভিউয়ারকে এটা জিজ্ঞাসা করেন যে, চাকরিটা হল কি না, সেটা কখনও ঠিক নয়। কথাটি বলার আগে সাবধান হোন। হ্যাঁ শুনতে গিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ‘না’ই শুনতে হতে পারে। তাই পজিটিভ ইম্প্রেশন দিয়ে ইন্টার্ভিউ শেষ করুন। কেননা, ইন্টার্ভিউতে শুধুমাত্র আপনি একাই আসেননি। আপনার আগেও কেউ এসেছেন, হয়তো আপনার পরেও আসবেন। যিনি ইন্টার্ভিউ নিয়েছেন তাঁকে একটু সময় দিন।
সর্বশেষ

মনে রাখবেন, ইন্টার্ভিউ টপকাতে পারলেই মনের মতো চাকরি কনফর্ম। তাই ভয় কে জয় করে, নিজেকে তৈরি করে নিন। একেবারে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে পৌঁছে যান সাফল্যের শিখরে।

আরও পড়ুন:

 

Leave a Comment