আত্ম-কর্মসংস্থান: গ্রামের প্রেক্ষাপট

আত্ম-কর্মসংস্থান: গ্রামের প্রেক্ষাপট আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বাউবি এসএসসি ২৩৫৮ ক্যারিয়ার শিক্ষা” এর  “কর্মক্ষেত্র নির্বাচন এবং ক্যারিয়ার উন্নয়ন” ইউনিট ৪ এর অন্তর্ভুক্ত।

 

আত্ম-কর্মসংস্থান: গ্রামের প্রেক্ষাপট

 

চলো গ্রামে যাই। গ্রামের প্রেক্ষাপটে কর্মসংস্থানের ভিন্নতা আছে। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ করতে হয় গ্রামের হাট-বাজার বা দোকান, খামার নার্সারী ইত্যাদি থেকে। আসুন, এবার আমরা গ্রামের কর্মসংস্থানের চিত্র দেখে নেই । নিজে নিজে কাজ করে স্বনির্ভরতা অর্জনই আত্ম-কর্মসংস্থান। গ্রাম ও শহরের মধ্যে আত্ম-কর্মসংস্থানের ধরন ভিন্ন হতে পারে। গ্রামের মানুষের দক্ষতাও ভিন্ন ধারার। গ্রামের মানুষের আত্ম-কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রগুলো হল: নার্সারী, ফসলের চাষ, মৎস্যচাষ, গবাদি পশু পালন, হাঁস-মুরগী পালন, ফলের চাষ। শাক-সবজির চাষ, দোকান দেওয়া, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, সার- কীটনাশকের দোকান বসানো, টেইলারিং দোকান, সাইকেল-রিক্সা মেরামতের দোকান দেওয়া ইত্যাদি ।

 

নার্সারী: বীজতলা তৈরি করে বিভিন্ন জাতের ফুল, ফল ও ফসলের চারা উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করে ভালো আয় করা সম্ভব। নার্সারী তৈরিতে জায়গা যেমন কম লাগে তেমনি পুঁজিও কম। তবে দক্ষতা ও শ্রম এখানে মূখ্য। নার্সারীর যত্ন নেওয়ার জন্য দু’চার জন বাড়তি মানুষ প্রয়োজন হয়। এছাড়া চারা উত্তোলন, নিয়মানুযায়ী সংরক্ষণ ও বিক্রির ব্যবস্থা করার জন্য দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হয়।

একটি নার্সারীতে কয়েকটি পরিবারের লোকজন কাজ করে বিধায় সবাই স্বচ্ছলভাবে চলার সুযোগ সৃষ্টি হয়। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে যোগাযোগ করে বিভিন্ন জাতের বীজ সংগ্রহ করা সহজ হয়। প্রয়োজনে সরকারি অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শও নেওয়া যায়। আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজনে সরকারি ব্যাংক গুলোর পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোতে তো আছেই।

 

গ্রামের প্রেক্ষাপট আত্ম-কর্মসংস্থান: গ্রামের প্রেক্ষাপট

 

হাঁস-মুরগী পালন: গ্রামে হাঁস-মুরগী পালনের জন্য খামারীদের মতো তেমন চিন্তা করতে হয় না। বাড়ির খোলা উঠান এবং বাড়ির পাশের পুকুর হাঁস-মুরগী পালনের জন্য চমৎকার জায়গা। এর পেছনে তেমন একটা সময়ও দিতে হয় না। মাঝে মাঝে প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করলেই হয়। রোগ-ব্যাধির হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য স্থানীয় প্রাণি সম্পদ অফিসের  সহযোগিতায় হাঁস-মুরগীর টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করলে মোড়ক থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হবে। গ্রামাঞ্চলে অবশ্য দেশি হাঁস-মুরগীর পাশাপাশি ফার্মের মুরগীর চাষ ও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

 

শহরের প্রেক্ষাপট আত্ম-কর্মসংস্থান: গ্রামের প্রেক্ষাপট

 

তবে ডিম ও মাংস উভয় পাওয়ার জন্য দেশি হাঁস-মুরগী পালনের উপর গ্রামের মানুষ বেশি জোর দেয়। মাঝে মাঝে শহরের পাইকাররা গ্রামে দেশি মুরগি কেনার জন্য যায়, ফলে এখন ভাল মূল্য পাওয়া যায়। আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার অনেকগুলো উপায়ের মধ্যে হাঁস-মুরগী পালন একটি। হাঁস-মুরগীর সংখ্যার উপর নির্ভর করে লোকবলও নিয়োগ দেওয়া যায়। প্রয়োজনে যুব উন্নয়ন অফিস থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণেরও সুযোগ রয়েছে।

সার ও কীটনাশকের দোকান বসানোঃ গ্রামের মানুষ কৃষি নির্ভর। কৃষির উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সার ও কীটনাশক ব্যবহার আবশ্যক। কারণ এগুলো জমিকে উর্বর ও পোকা মাকড়ের হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করে। কৃষক হাতের কাছে এ ধরনের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পেলে সুবিধা হয়। তাই গ্রামের মাঝামাঝি জায়গায় এ ধরনের দোকান বসিয়ে ব্যবসা করা যায়। এতে কর্মসংস্থান যেমন হয় তেমনি আয় রোজগারের পথ ও সৃষ্টি হয়। প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশকের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য বড় বড় ডিলারদের সাথে যোগাযোগ করা যায়। ফলে ডিলাররাই দোকানে সরাসরি মালামাল সরবরাহ করে। কৃষকের উপকার যেমন হয় তেমনি ফসলও ভাল হয়।

 

কেস-স্টাডি: কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের ছেলে আবদুল মালেক উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে একটি ঔষধ কোম্পানীতে সেলস্ প্রমোশন অফিসার হিসেবে চাকরি নিয়েছে। বেশ কয়েক বছর চাকরি করার পর ঔষধ ব্যবসার খুটিনাটি বিষয়গুলো জেনে নিয়েছে। এর পর চাকরি ছেড়ে গ্রামের বাজারে একটি ঔষধের দোকান দিয়েছে। দোকানে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ানো ও মানুষের সেবা করার জন্য দোকানের বাড়তি অংশে একজন চিকিৎসকের চেম্বার দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। ঔষধ বিক্রিতে সহায়তা করার জন্য দু’জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যে তার ঔষধ ব্যবসায় সে বেশ লাভবান হয়েছে। এখন পাশের গ্রামেও আরেকটি ঔষধের দোকান খুলেছে।

কয়েক বছরের অভিজ্ঞ কর্মচারীর সাথে আরো দু’জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে বেশ ভালোভাবেই ঔষধের ব্যবসা পরিচালনা করছে। এখন আর আবদুল মালেককে দোকানে বসতে হয় না। প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ তার মূল কাজ। পাশাপাশি দৈনিক বেচাকেনার হিসাবটিও আপ-ডেটেড রাখে। মাঝে মাঝে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর সেলস্ অফিসার দোকানে গিয়ে প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করে। পূর্বের চাকরির জমানো টাকা আবদুল মালেক পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করেছে। মাঝে মাঝে সরকারি উদ্যোগে আয়োজিত প্রশিক্ষণ কোর্সে আবদুল মালেক ও তার কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করে দক্ষতা অর্জন করে। এভাবেই তার নিজের সংসার ও আরো কয়েকটি পরিবার স্বচ্ছলভাবে চলার ব্যবস্থা করছে।

 

Google news logo আত্ম-কর্মসংস্থান: গ্রামের প্রেক্ষাপট
আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন

 

সারসংক্ষেপ

গ্রামের মানুষের আত্ম-কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে নার্সারী, ফসলের চাষ, মৎস্যচাষ, গবাদি পশু পালন, হাঁস-মুরগী পালন, ফলের চাষ, শাক-সবজির চাষ, দোকান দেওয়া, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, সার-কীটনাশকের দোকান বসানো, টেইলারিং দোকান, সাইকেল-রিক্সা মেরামতের দোকান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বন্ধুরা, আপনারা যারা গ্রামে বসবাস করছেন ইচ্ছা করলেই কোনোনা কোনোভাবে এসব পেশার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারেন। এতে লজ্জার কিছু নেই। আপনারা কাজ করে উপার্জনের পথ তৈরি করে নিচ্ছেন, এতে আনন্দ আছে। পরিবারকে স্বনির্ভর করার জন্য পেশার বিকল্প নেই ।

 

আরও পড়ুন….

Leave a Comment