চাকরির প্রথম বছরের গাইডলাইন | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস্ বিশ্বাস

চাকরির প্রথম বছরের গাইডলাইন | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস্ বিশ্বাস :  সৌভাগ্যবান না হলে এই বাজারে খুব কম পাবলিক আছে যে বেকারত্বের যন্ত্রণা না সহ্য করেই চাকরি পেয়েছে। জুতার সুকতলা খইয়ে, কপালে ভাজ ফেলে, সার্টিফিকেটগুলোকে আরো মলিন করে কত কাঠকয়লা পুড়িয়ে তবেই না জুটে ‘সোনার হরিণ’। চাকরির প্রথম বছরটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুরুতে যা শিখবেন সেই ভিতটাই কিন্তু কাজে দেবে পরবর্তীকালে। তাই এই প্রথম বছরটা সজাগ থাকুন। ভালো কাজের পাশাপাশি হয়ে উঠুন দক্ষ কর্মী- ভালো সহকর্মী।

চাকরির প্রথম বছরের গাইডলাইন | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস্ বিশ্বাস

চাকরির প্রথম বছরের গাইডলাইন

চাকরি করুন পুরো বছরটা

প্রথম চাকরি কম পক্ষে এক বছর করুন। যত সমস্যাই থাক এক বছরের আগে চাকরি ছাড়ার কথা ভাববেন না। কারণ প্রথম বছরেই অনেক কিছু শেখার থাকে। তাই এক বছরের আগে চাকরি ছাড়লে পরের যেখানে জয়েন করতে যাবেন সেই কোম্পানি ভাবতেই পারে আপনার শেখার ইচ্ছে কম বা আপনি মানিয়ে নিতে পারেন না।

পরিশ্রমের বিকল্প নেই

সাধারণত, নতুন চাকরিতে সিনিয়ররা বেশি খাটিয়ে নেয়। আপনি বুঝতে পারছেন সেটা। কিন্তু আপনার করার কিছু নেই। মুখ বুঝে কাজ করতে-করতে ভাবছেন – চাকরিটা ছেড়েই দেবেন। কিন্তু এমন করবেন না। এখানে যে কাজগুলো আপনি করছেন, সেগুলো আগে করেননি। আপনার প্রত্যেকদিন নতুন-নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। নতুন কাজ শিখছেন। যেগুলো শিখছেন, প্রতিদিন সেগুলো প্র্যাকটিস হচ্ছে। আপনার স্কিল বাড়ছে, দক্ষতা অর্জিত হচ্ছে। কেরিয়ারে উঠতে হলে, আপনাকে এগুলো করতেই হত, হয় কিছুদিন আগে, নয়তো কিছুদিন পরে। বেশি পরিশ্রম করে, আগেভাগেই যদি কাজের কাজটা সেরে ফেলতে পারেন, আখেরে কিন্তু সুবিধা আপনারই। আর চাকরির ক্ষেত্রে নতুন অবস্থাতেই যদি নিজেকে ‘কাজের মানুষ’ হিসেবে তুলে ধরতে পারেন, তাহলে অ্যাপ্রেইজাল বা প্রমোশনের সময় মেওয়াটা কিন্ত্ত ফলবে আপনারই জন্য৷

Office Workers 4 চাকরির প্রথম বছরের গাইডলাইন | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস্ বিশ্বাস

গুরুত্বপূর্ণ সময়ানুবর্তীতা

অফিসের সব কাজ সময়মত করুন। অফিসে পৌঁছনো থেকে শুরু করে প্রোজেক্ট রিপোর্ট জমা দেওয়া, কোনও কাজ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর করবেন না। কাজ হয়ে গেলেই বেরিয়ে যাবেন না। অন্য সহকর্মীদের কোনও সাহায্যের প্রয়োজন আছে কিনা জেনে নিন। তাদের সঙ্গে বেশিক্ষণ থাকলে বেশি কাজ শিখতে পারবেন।

নাম ভুলার নয়

অফিসে সহকর্মী সবার নাম মনে রাখার চেষ্টা করুন। তারপর তাঁদের সম্ভন্ধে অল্প কিছু ইনফো জেনে রাখুন। যেমন কে কোথায় থাকেন, কোথাকার ছাত্র ছিলেন, কোন ডিপার্টমেন্ট দেখেন, কার মেজাজ কেমনÑ এই বিষয়ে কিছুটা জেনে রাখলে আখেরে আপনারই সুবিধে হবে।

অজুহাত নয়

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথম চাকরিতে বসের কাছে লাগাতার বকা খেতে হয়। ডেটলাইনের চাপ আসবে। ‘এটা আমার নতুন চাকরি’ বা ‘আমাকে স্যর একটু অভ্যস্থ হতে দিন’ এসব অজুহাতে পার পাবেন না। আর পার যখন পাবেন না, তখন এসব বলবেনও না।

অবশ্যই বেশি কাজ করুন

প্রথম একটা বছর একটু বেশি কাজ করুন। চাকুরীর এগ্রিমেন্টে যা লেখা আছে সেই কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে যা লেখা নেই সেই কাজও করার চেষ্টা করুন। নিজের কাজ হয়ে যাওয়ার পরে সহকর্মীদের ব্যক্তিগত কোনও কাজেও সাহায্য করে দিন। অফিসে নতুন কোন টেকনোলজির ব্যবহার শুরু হরে তা দ্রুত অধঃস্থ করুন। এতে হয়তো আপনার বাড়ি ফিরতে কিছুটা রাত হবে। কিন্তু এক বছর পর এটারই ফল পাবেন।

Office Workers 5 চাকরির প্রথম বছরের গাইডলাইন | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস্ বিশ্বাস

খাবার ভাগ করে নিন

একসঙ্গে লাঞ্চ করুন। আপনার সুপারভাইজার বা সিনিয়র কলিগদের এড়িয়ে যাবেন না। কারণ এটাই শ্রেষ্ঠ সময় পজিটিভ রিঅ্যাকশন তৈরি করার।

নিজেকে গুটিয়ে নয়, উজাড় করে দিন

প্রথম এক বছর যে কাজই করবেন, নিজের শ্রেষ্ঠটা দেওয়ার চেষ্টা করুন। কিছুদিন সিনিয়ররা কীভাবে কাজ করছেন পর্যবেক্ষণ করুন। তারপর সেই অনুযায়ী নিজের কাজটা করুন।

অফিসে যাদের এডিয়ে চলবেন

অফিসে মিথ্যুক, শর্ট-কাট মাস্টার, ফ্যামিলি পার্সন, প্রবলেম চাইল্ড আর আয়েশিদের এডিয় চলবেন। এরা আপনার উপার তো করবে না উল্টো পদে পদে সমস্যায় ফেলবে।

অফিসকে কলেজের থেকে আলাদা করুন

কলেজ আর অফিসে বিস্তর ফারাক। এখানে কলেজের মতো বছরে একবার পরীক্ষা হয় না। অফিসে কিন্তু রোজই পরীক্ষা। আপনার প্রতিদিনের পারফরমেন্সের ওপর নির্ভর করবে আপনার টিকে থাকা।

স্মার্ট ফোন

কলেজ লাইফে হাতের মোবাইলটি নিয়ে অনেক গেম খেলা করেছেন। ফেসবুকে সময় দিয়েছেন। চাকুরীতে ঢুকে সঙ্গে-সঙ্গে নিজেকে বদলে ফেলা বেশ ঝামেলার। মানুষ তো অভ্যাসের দাস। ফলে বস হয়তো আপনাদের নতুন প্রোজেক্ট বোঝাচ্ছে, অথবা এইচআর এসে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মিটিং করছে, আপনার ইচ্ছে করবে একটা বোর্ডরুম থেকে সেলফি তুলে পোস্ট করে দিই। বা বসের মাঝখানেই মনে হবে ম্যাসেজ পেলেন তার উত্তর দিয়। কিন্তু এমনটি করবেন না। স্মার্টফোনের অ্যাডিকশন কমানোর চেষ্ট করুন।

Office Work Place 3 চাকরির প্রথম বছরের গাইডলাইন | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস্ বিশ্বাস

বস সম্পর্কে নলেজ রাখুন

একটা জিনিস মাথায় রাখুন, বসও মানুষ। তিনি ‘পারফেক্ট’ নন। তাঁর জীবনেও নানারকমের সমস্যা থাকতে পারে। আর সমস্যার কারণে বস যদি জর্জরিত থাকেন, তাহলে সেগুলোর ‘এসকেপ রুট’ হিসেবে অধস্তনদের ওপর চাপ বাড়তে পারে। তাছাড়া বসের ওপরেও বস থাকে৷আপনার ইমেডিয়েট বসকে হয়তো ওপরঅলার কাছে নানা কাজের জবাবদিহি করতে হয়। তাই, এটা কখনও আশা করবেন না আপনার বস আপনার ওপর সদয় থাকবেন। সে যতই আপনার এটা প্রথম চাকরি হোক না কেন! মনে রাখবেন বস কিন্তু আপনার বন্ধু বা আত্মীয় নয়। তাঁর ব্যবহার যতই বন্ধুত্বপূর্ণ হোক না কেন মনে রাখবেন আপনার কাজটাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত কথা বলবে।

হয়ে উঠুন প্রফেশনাল

প্রফেশনাল হয়ে উঠুন। শুধু কাজ নয়, পোশাক, ম্যানার্স, চলাফেরা, কথা বলা সবেতে প্রফেশনাল হয়ে উঠুন। নিজের লক্ষ্যে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে পুরো টিমকেও এগিয়ে নিয়ে চলার চেষ্টা করুন।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment