ফোনে ইন্টারভিউ | ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট | শামস বিশ্বাস : কর্মী বাছায়ে ইন্টারভিউ সুপ্রাচীন একটা পদ্ধতি। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এই পদ্ধতিতেও লেগেছে প্রযুক্তির হাওয়া। অনেক সংস্থা সময় আর সাশ্রয়ের জন্য ইন্টারভিউ নিচ্ছে ভিডিও কনফারেন্স অথবা ফোনে। কচ্ছপগতি ইন্টারনেট আর নানা সীমাবদ্ধতার জন্য ফোনটাই অনেক বেশি ব্যবহার হচ্ছে।
ফোনে ইন্টারভিউ
‘ফোন ইন্টারভিউ’ হয় স্ট্রাকচার ইন্টারভিউ ম্যাথড মেনে। এই পদ্ধতিতে আবেদনকারীর সিভি দেখে পছন্দ হলে, তাকে প্রাথমিক ইন্টারভিউটা দিতে বলা হয় ফোন মারফতই। এই ফোন ইন্টারভিউ উতরে গেলে কর্মপ্রার্থীকে ডাকা পরবর্তী পর্যায়ের জন্য। অনেকে ফোন ইন্টারভিউকে সেভাবে গুরুত্ব দিতে চান না। ভাবেন লিখিত পরীক্ষায় এবং সশরীরে ইন্টারভিউ বোর্ড-এ গিয়ে বাজিমাত করবেন। কিন্তু এটা মনে রাখা দরকার যে সব সংস্থা ফোন ইন্টারভিউ পদ্ধতি ব্যবহার করে তাদের চাকরি করতে হলে এই ইন্টারভিউয়ের চৌকাঠ না পেরলে চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন প্রথমেই দফারফা হয়ে যেতে পারে।
- ফোনে ইন্টারভিউয়ের জন্য ল্যান্ডফোনের নম্বর দিন। লম্বা সময় ধরে কথা বলার জন্য ল্যান্ডফোনের বিকল্প নেই। নিয়োগকর্তার পক্ষ থেকে যখন ইন্টারভিউয়ের সময় ঠিক করা হবে, অবশ্যই বাড়ির সবাইকে জানিয়ে রাখুন ওই সময় আপনার ইন্টারভিউ হবে। ফলে, খুব দরকার না পড়লে ল্যান্ড ফোনাটা যেন কেও ব্যবহার না করে।
- ঘরে নির্ঝঞ্ঝাট হয়ে বসুন। মনোযোগ নষ্ট হয় এমন কিছু সরিয়ে রাখুন। যেমন এফএম রেডিও, টিভি, মোবাইল সরিয়ে রাখুন। বাসায় ছোট্ট বাচ্চা থাকলে, তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে দূরে রাখুন। কোন পোষা প্রাণী থাকলে সেটাকেও দূরে রাখুন, যেন আপনাকে ইন্টারভিউয়ের সময় বিরক্ত না করতে পারে।
- মোবাইল ফোন ইন্টারভিউ দিলে কলড্রপ বা নেটওয়ার্কে সমস্যা না হয় এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিন। হ্যান্ডসেটে কোন সমস্যা থাকলে পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে ফোন বদলে নিতে পারেন। ‘কল ওয়েটিং’ সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় রাখুন। ডুয়েল সিমের ফোন হলে, দ্বিতীয় সিমটি বন্ধ রাখুন।
- ফোন ইন্টারভিউ সাধারণত আধঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই সময় গলা শুকিয়ে যেতে পারে। কাশির আসতে পারে। তাই হাতের কাছে পানি নিয়ে বসাটা অনেক কাজের।
- যথা সম্ভব স্বাভাবিক স্বরে কথা বলুন। আপনার প্রশ্নকর্তা যখন কথা বলছেন, তখন মাঝখানে কথা বলবেন না। উল্টোদিক থেকে কথা শেষ হলে মনে-মনে তিন সেকেন্ড গুনে নিন। তারপর আপনি বলুন।
- ফোনে ইন্টারভিউতে প্রশ্নকর্তা আপনাকে দেখতে পারছেন। কোনও উত্তরে আপনাকে যদি ‘না’ বলতে হচ্ছে, সেটা কেন বলছেন, তার কিছুটা ব্যাখ্যা আপনার শরীরিভাষাতে থাকে। আপনার নেতিবাচক উত্তর বুঝতে আপনার প্রশ্নকর্তার জন্য সেটা সুবিধাজনক। কিন্তু ফোন ইন্টারভিউয়ে তিনি শুধু আপনার কণ্ঠস্বর শুনতে পারছেন। সুতরাং, এখানে শুধু ‘না’ শব্দটি উত্তর হিসেবে থাকলে, ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা থাকে। তাই পারলে নেতিবাচক উত্তর এড়িয়ে যান। তবে, কোনোকিছুর ক্ষেত্রে ‘না’ যদি আবশ্যিক হয়, নিশ্চয়ই বলবেন।
- কথোপকথনের মাঝে এমন কিছু করবেন না যাতে প্রশ্ন কর্তার মনে হয় আপনার মনোযোগ অন্যদিকে সরে গেছে।
- কথা ঘোরাবেন না। সহজ কথায় আত্মবিশ্বাসের সাথে সকল প্রশ্নের উত্তর দিন।
ফোন ইন্টার্ভিউতে সবচেয়ে জরুরী মনোযোগ ধরে রাখা। সামনে যেহেতু কেউ বসে নেই, তাই অনেক সময় কথা বলতে বলতে মনোযোগ হারিয়ে যেতে পারে। তাই সবসময় মনোযোগ ধরে রাখার পিছনে সচেতন থাকতে হবে। এজন্য ব বন্ধু বান্ধব বা অন্য কারও সাথে কোন জটিল বিষয়ে তথ্য উপাত্ত দিয়ে আলাপ করার রেয়াজ করতে পারেন। কাগজে তথ্য লিখে ফোনে বলতে পারেন বা ফোনে যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ নিয়ে খেলা করতে পারেন। এতে মনোযোগ ধরে রাখার অভ্যাস হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: